বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে হল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গ দখলে পাকা খেলোয়াড়দেরই মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিল গেরুয়া শিবির। অন্যান্য রাজ্যে নির্বাচনে যারা সাফল্য এনে দিয়েছেন সেই ভোট ম্যানেজারদেরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল তারা। এছাড়া মঙ্গলবারের বৈঠকে হল ডিসেম্বর পর্যন্ত দলের কর্মসূচির পরিকল্পনাও। সূত্রের খবর, নভেম্বরের শেষে ফের পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন অমিত শাহ।
মঙ্গলবার হেস্টিংসে বিজেপির পার্টি অফিসে বসে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। তাতে রাজ্যের তাবড় নেতা ছাড়াও হাজির ছিলেন দলের ৩ পর্যবেক্ষক ও কেন্দ্রের একাধিক নেতা। ছিলেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা, দেবশ্রী চৌধুরী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অনুপম হাজরা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের থেকে হাজির ছিলেন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সুনীল দেওধর, অমিত মালব্য, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন প্রমুখ। সেই বৈঠকেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে ধারারেখ ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা হয়েছে। একই সঙ্গে গোটা রাজ্যকে ৫ ভাগে ভাগ করে সংগঠনের হালচাল জানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের ৫ দুঁদে ভোট ম্যানেজারকে।
এদিনের বৈঠকে উত্তরবঙ্গ, নবদ্বীপ, রাঢ়বঙ্গ, মেদিনীপুর ও কলকাতা, এই ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে রাজ্যকে। মেদিনীপুর জোনে রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও ঝাড়গ্রাম। রাঢ়বঙ্গ জোনে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম। কলকাতা জোনে রয়েছে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার ৩টি মহকুমা। নবদ্বীপ জোনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার ১টি মহকুমা। এছাড়া উত্তরবঙ্গ জোনে রয়েছে ৮ জেলা।
প্রতিটি জোনে সংগঠনের হাল খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে। এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য নাম সুনীল দেওধরের। ত্রিপুরার বিজেপির হয়ে ভোট পরিচালনা করেছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনে ছোট্ট রাজ্যটি থেকে ২৫ বছর পর উৎখাত হয়েছিল বামেরা। তাঁকে মেদিনীপুর জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্ব পেয়েছেন বিজেপির SC মোর্চার সভাপতি বিনোদ সোনকর। কলকাতা জোনের দায়িত্বে হরিয়ানার নেতা দুষ্মন্ত কুমার গৌতম। বিনোদ তাওড়ে পেয়েছেন নবদ্বীপ জোনের দায়িত্ব। উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্বে রয়েছেন হরিশ দ্বিবেদী।
বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী কাল থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত নিজেদের জোনে গিয়ে সেখানকার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন জোনের দায়িত্বে থাকা নেতারা। দলের সাংগঠনিক হাল নিয়ে আলোচনা করবেন জেলা সভাপতি, পর্যবেক্ষক ও জেলা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে। দরকারে তাঁদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকও করতে পারেন তাঁরা। এর পর রিপোর্ট দেবেন দিল্লিকে। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে নভেম্বরের শেষে ফের একবার পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এছাড়া এদিনের বৈঠকে বিস্তারকদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। সূত্রের খবর, বিস্তারকরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বৈঠক করবেন জেলার নেতাদের সঙ্গে। জেলার নেতারা যাবেন মণ্ডলে। মণ্ডলের নেতারা যাবেন শক্তিকেন্দ্রে। শক্তিকেন্দ্রের নেতারা যাবেন বুথে বুথে। এর পর প্রত্যেকে ওপরতলায় রিপোর্ট জমা দেবেন। দলের সঙ্গে ভোটারদের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে এই পদক্ষেপ বলে বিজেপি সূত্রের খবর। এছাড়া বিভিন্ন শক্তিকেন্দ্রের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের ব্যবস্থাও থাকবে।
এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের নেতৃত্বে থাকবেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।
এদিন বৈঠক শেষে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘যেটা দিল্লি থেকে কথা হয়েছিল। বিভিন্ন মোর্চা, বিভিন্ন স্তরে আন্দোলন কোথায় কী কাজ হবে তার একটা সূচি তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কোথায় কী আন্দোলন হবে তার একটা তালিকা তৈরি হয়েছে’।