জেল হেফাজতে থাকা বিজেপি কর্মীর মৃত্যুতে দ্বিতীয় বার ময়না তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ময়না তদন্তের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করতে হবে বলেও নির্দেশ আদালতের।
জেলে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে বিজেপি কর্মী মদনকুমার ঘোড়ইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। জেলে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে এসএসকেএম হাসাপতালে নিয়ে আসা হয়। ১৩ অক্টোবর সেখানে মারা যান এই বিজেপি কর্মী। বিজেপি এই ঘটনায় তৃণমূল জড়িত বলে মামলা করে হাইকোর্টে। তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এ ছাড়াও হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালে নয়, ময়না তদন্ত হবে আর জি কর হাসপাতালে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং ভিডিওগ্রাফি আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে হাইকোর্টে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার কনকপুর গ্রামের বাসিন্দা যুবক কিশোর ঘোড়ই কয়েকমাস আগে বাসুদেরপুর এলাকার গৌরাঙ্গ পাখুরিয়ার যুবতীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেই দাবি স্থানীয়দের।
যুবতীর বাড়ি থেকে পটাশপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ছেলেটির মা এই ঘটনার পর আত্মগোপন করেন। দীর্ঘ খোঁজাখুজি করেও মেলেনি মা ও ছেলের খোঁজ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুবকের কাকা মদন কুমার ঘোড়ইকে পটাশপুর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। আদালত তার জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। জেল হেফাজতে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ খবর দেয় মদনবাবুর মৃত্যু হয়েছে।
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তাঁর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাই আমাদের কর্মী মদন মারা গিয়েছেন। আমরা ওই পুলিশকর্মীর শাস্তি দাবি করছি।’
হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থ এই দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায় সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে মামলাটি সিঙ্গল বেঞ্চে ফিরিয়ে দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্য সরকারকে সময় দিতে হবে জবাব দেওয়ার জন্য। আর ততক্ষণ দেহ সংরক্ষিত করে রাখতে হবে।’
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিজেপি। পুলিশি অত্যাচার মদনবাবুর মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকের। যদিও পটাশপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস মাঝি বলেন, ‘যুবক, যুবকের কাকা এবং তরুণীর পরিবার বিজেপি সমর্থক। পুলিশ নয় জেল হেফাজতে মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। তদন্ত হলে আসল সত্যি সামনে আসবে।’ তবে দেহ নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় বিজেপি নেতা–কর্মীদের। এই ঘটনাতেও সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে। শুক্রবার বিজেপি কর্মীর দেহ কলকাতায় আনা হয়। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ করেন বিজেপি নেতাকর্মীরা।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে সরকার তদন্তের ব্যবস্থা করেছে। বিজেপি প্রত্যেক মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে।’