উচ্চমাধ্যমিকে পাঁচশোর মধ্যে প্রাপ্ত ৪৯৯ নম্বর। তারপরও সেদিকটা আলোকিত হলো না। বরং আলোকিত হলো তাঁর ধর্ম। এককভাবে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান দখল করে সংবাদ শিরোনামে মুর্শিদাবাদের কান্দির রুমানা সুলতানা। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস সেকথা ঘোষণা করার সময় রুমানার নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদের এক ‘মুসলিম কন্যা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন। বিতর্কের সূত্রপাত হয় এখান থেকেই। প্রশ্ন উঠছে, পরীক্ষায় যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে, তার নাম উচ্চারণেরও আগে কেন ‘মুসলিম’ পরিচয়টি উল্লেখ করা হল?
বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। এমনকী ইমাম অ্যাসোসিয়েশন তীব্র বিরোধিতা করেছে। উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নিজের সাম্প্রদায়িক, ন্যক্কারজনক মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। অভদ্রমহিলাকে এক্ষনি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেছেন মহম্মদ ইয়াহিয়া। যিনি ইমাম্ অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি।
শুক্রবার এই বিষয়ে আসরে নামেন বিজেপি নেতা। টুইট করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য লেখেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় তোষণের রাজনীতি নতুন মাত্রা পেল। উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের সময় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত মেয়েটির নাম বলার আগে তার ধর্মপরিচয় উল্লেখ করলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী। উচ্চ মাধ্যমিকের একটি মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াল তাঁর ধর্ম পরিচয়। এই ছাত্রছাত্রীদের আর কত দিন এই সব সহ্য করতে হবে?’ এখানে খানিকটা রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রীর এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘মুসলিম মহিলা প্রথম হয়েছে’ বলে যাঁরা বারবার বলছেন তাঁদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে! মুসলিম মেয়ে বলে কি কোনও অঘটন ঘটেছে? মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রম করে প্রথম হতে হয়। শ্রুতিকটু শুনতে লাগে যখন বলা হয় প্রথম হয়েছে মুসলমান মেয়ে। ছাত্রীর নাম দেখে সে কোন ধর্মের বোঝানোর দায়িত্ব না নিলে খুশি হব। একজন ছাত্রী ফার্স্ট, ছেলেদের থেকে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা এটা লক্ষণীয়।’