দুই চোখ দিয়েই বেরোচ্ছিল রক্ত, মুখে রক্ত, যৌনাঙ্গে ক্ষত, মুখে আঘাতের চিহ্ন, নখে আঘাতের চিহ্ন, পায়ে আঘাতের চিহ্ন, পেটে আঘাতের চিহ্ন, হাতে আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন, ভেঙেছে হাড়- আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল থেকে যে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এরকমই বীভৎসতা ধরা পড়ল। একটি মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে যে সব বিষয় উঠে এসেছে, তাতে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে এক পুলিশ অফিসার বলেছেন, 'এটা নিশ্চিতভাবে আত্মহত্যা নয়। প্রথমে তরুণীর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। তারপর হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।'
SIT গঠন কলকাতা পুলিশের
যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। আপাতত কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে অন্যান্য ধারা যুক্ত করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আর কী কী বিষয় উঠে এসেছে?
২২ বছরের চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী) ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাত তিনটে থেকে সকাল ছ'টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তরুণীর গলার হাড় ভেঙে যাওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে যে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। কার্পেটের উপর থেকে একাধিক চুল পাওয়া গিয়েছে। নীল রঙের কার্পেটে মিলেছে ছোপ রক্তের দাগ।
তারইমধ্যে ময়নাতদন্তের পরে তরুণীর দেহ বের করার সময় তুমুল ধস্তাধস্তি হয়। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তরুণী চিকিৎসকের দেহ বের করে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু তারপর যে ঘটনা ঘটে, তাতে ফুঁসছে চিকিৎসক মহল। ফুঁসছেন সাধারণ মানুষও।
১ ঘণ্টা বাড়ির বাইরে পড়ে তরুণীর নিথর দেহ
ময়নাতদন্তের পরে প্রায় এক ঘণ্টা তরুণী চিকিৎসকের নিথর দেহ পড়ে থাকে বাড়ির সামনে। অভিযোগ উঠেছে যে বাবা এবং মা জানতেনই না যে তাঁদের আদরের মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁরা হাসপাতাল-থানা করছিলেন। আর সেই ঘটনায় ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, এরকম কাজে তাঁরা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। আর সেইসময় যাঁদের চোখে তরুণীর নিথর দেহের মুখটা দেখেছেন, তাঁরা স্রেফ মুখটার কথা ভুলতে পারছেন না। ভুলতে পারছেন না কীরকম বীভৎসতা, এরকম পাশবিকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তরুণীকে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, ‘মানুষ এতটাও বর্বর হতে পারে…!’