শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্ক থাকলেই সন্তানের প্রকৃত বাবা হওয়া যায় না। সন্তানের প্রকৃত বাবা হতে গেলে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। যোগাযোগ ছাড়াই সন্তানের উপর অধিকার দাবি করা যায় না। হাওড়ার এক শিশুকন্যার অধিকার দাবি নিয়ে একটি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের।
মামলার সূত্রপাত হয় হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা বছর চারেকের এক শিশু কন্যার অধিকার নিয়ে। নিজের মেয়েকে কাছে ফিরে পেতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবা। হাইকোর্ট সূত্রে খবর, ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে ওই শিশুকন্যার জন্ম হয়। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অশান্তির জেরে তার পরের বছরই আত্মঘাতী হয়ে যায় তার মা। ফলে দিদিমা শিশুকন্যাকে নিজের কাজ ছাড়া করতে চাননি। ফলে তিনি নিজের কাছেই শিশুকন্যাকে রেখে দেন। সেই সময় শিশুকন্যাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপরতাও দেখাননি বাবা। ফলে দিদিমা এবং প্রতিবেশী এক মহিলার স্নেহে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে শিশুকন্যা। কিন্তু দিদিমার আদর স্নেহও বেশি দিন স্থায়ী হল না শিশুকন্যার কপালে। পরের বছর তার দিদিমাও আত্মহত্যা করেন। যদিও মৃত্যুর আগে আত্মহত্যার জন্য জামাইকে দায়ী করে গিয়েছেন শিশুকন্যার দিদিমা। তখন দিদিমার পড়শি ওই মহিলা শিশুকন্যাকে নিজের কাছে রেখে দেন।
এরপরে নিজের শিশুকন্যাকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বাবা। কিন্তু ওই মহিলা শিশুকন্যাকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে কিছুতেই রাজি নন। তিনি নিজের কাছে রেখে দিতে চান শিশুকন্যাকে। এরপরে মেয়েকে ফিরে পেতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বাবা। বাবার যুক্তি তার আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য রয়েছে। ফলে মেয়ে তার কাছে ভালো থাকবে। কিন্তু বাবার সেই যুক্তি আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের মতে, শিশু কন্যা অন্য কাউকে নিজের পরিবার হিসেবে মনে করে এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অন্য পরিবেশে গেলে শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তবে শিশু বাবার বিপক্ষে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকলেও শিশুর সঙ্গে বাবার যাতে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে সে সুযোগও করে দিয়েছে আদালত। আগামী শনিবার বাবা সারাদিন মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ২৯ নভেম্বর আদালত শিশুর সঙ্গে কথা বলবে। ওইদিন মামলার পরবর্তী শুনানি।