সেই কোনকালে (রুপোলি পর্দায়) হীরকের অত্যাচারী রাজা বলেছিলেন, 'ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে'! এবার একেবারে সেই উক্তি ধার করেই ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
তাঁর অভিযোগ, উচ্চশিক্ষায় রদবদল করার নামে আদতে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথ পাকা করছে ইউজিসি। ব্রাত্যর স্পষ্ট বার্তা, ইউজিসি যদি তাদের নতুন প্রস্তাবগুলি কার্যকর করে, তাহলে আগামী দিনে পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পঠনপাঠনের সমান এবং ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
ফলত, জ্ঞান ও সুশিক্ষার অভাবে তাঁরা যেকোনও অন্য়ায়ের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলতে শিখবেন না। ব্রাত্যর কঠোর বার্তা, ঘুরপথে আসলে সেটাই করতে চাইছে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তোপ দেগেছেন ব্রাত্য বসু।
প্রসঙ্গত, ইউজিসি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বার্থে ভারতের প্রচলিত উচ্চশিক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বদল আনা জরুরি। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সেই বদলেরই জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে।
সেই বদল কেমন হতে চলেছে, সেই সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রকাশ করেছে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে বছরে দু'বার করে পড়ুয়াদের ভর্তি করার ক্ষমতা রয়েছে, তারা সেই পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে জুলাই-অগস্ট এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সেশনে পড়ুয়াদের ভর্তি করা যাবে।
এই খসড়া প্রস্তাব সামনে আসতেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। নিজের এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'ইউজিসি-র Draft UGC (Minimum Standards of Instructions in the Award of UG and PG Degrees) Regulations 2024 দেখে মনে হল এর সাধ অনেক, কিন্তু সাধ্যের বিষয়ে সে নিশ্চুপ। বিদেশের অনুকরণ করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার খোল-নলচে বদল হবে, কিন্তু অর্থ আসবে কোথা থেকে?'
এখানেই থেমে থাকেননি শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর মতে এই সিদ্ধান্ত, 'আসলে চুপি চুপি পেছনের দরজা দিয়ে উচ্চশিক্ষাকে ব্যয়বহুল এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা, যাতে সাধারণ বাড়ির ছেলে মেয়েদের সাধ্যের বাইরে চলে যায়।'
সবশেষে ব্রাত্য বসু একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখেছেন - 'ওরা যত বেশি জানে, তত কম মানে'।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার বেসরকারিকরণ নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা দোষারোপ নতুন কিছু নয়। রাজ্যের সরকার যেমন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শিক্ষানীতির গৈরিকীকরণ এবং তার বেসরকারিকরণ নিয়ে সরব হয়েছে, তেমনই আবার রাজ্যের বিরুদ্ধে বাম, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে লাটে তোলার অভিযোগ করেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, ইউজিসি-র খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসার পর ফের এ নিয়ে নতুন করে দোষারোপের পালা শুরু হতে পারে।