বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > কলকাতা > মা হারা শিশুদের মাতৃদুগ্ধের যোগান দিতে নেটওয়ার্ক তৈরি কলকাতায়

মা হারা শিশুদের মাতৃদুগ্ধের যোগান দিতে নেটওয়ার্ক তৈরি কলকাতায়

ফাইল ছবি (Sergei Bobylev/TASS/dpa/picture alliance)

কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেই একমাত্র মিল্ক ব্যাঙ্ক রয়েছে৷ তাও হাসপাতালে ভর্তি শিশুরাই এই ব্যাঙ্কের সুবিধা পায়৷ এই পরিস্থিতিতে এই দুই তরুণী শিশুদের সঙ্গে দুধ ডোনার মায়েদের সংযুক্ত করতেই গড়ে তোলেন এই রিসোর্স নেটওয়ার্ক

জন্মের পরই অনাথ সদ্যোজাত৷ কিংবা কোভিডের জন্য নবজাতকের থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছে মাকে৷ এই পরিস্থিতিতে শিশুকে স্তন্যপান করাবেন কে?

সমাধানে তথ্যপঞ্জী গড়তে উদ্যোগী দুই তরুণী৷ মহাশ্বেতা দেবীর 'স্তনদায়িনী' গল্পে যশোদা জমিদারবাড়ির শিশুদের নিজের বুকের দুধ দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন৷

এককালে এভাবেই অসহায় শিশুদের মাতৃদুগ্ধের যোগান দিতে হাজির হতেন দুধ-মায়েরা৷ কোভিড পরিস্থিতি বিভিন্ন বিষয়ের মতো স্তন্যপানের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি করেছে৷ সদ্যোজাত শিশুকে রেখে মারা গিয়েছেন অনেক নারী৷ এছাড়া অনেক শিশুর মা কোভিডের জন্য কোয়ারান্টিনে রয়েছেন৷ তার ফলে শিশুদের থেকে জন্মদাত্রীকে দীর্ঘসময় দূরে থাকতে হচ্ছে৷

অথচ এই মা-হারা বা মায়ের থেকে দূরে থাকা শিশুদের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ৷ তার ফলে কি এই প্রজন্মের একটা অংশ মাতৃদুগ্ধের অভাবে ভবিষ্যতে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে? এই প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলেছিল বৈদেহী দাস ও মণিময়ী চক্রবর্তীকে৷ নবজাতকেরা যাতে মাতৃদুগ্ধে বঞ্চিত না হয় , সেই লক্ষ্যে তথ্যপঞ্জী গড়ছেন এই দুই তরুণী, যার পোশাকি নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্রেস্ট মিল্ক রিসোর্স নেটওয়ার্ক'৷ কেন এমন উদ্যোগ? মণিময়ী বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেন রিসোর্স খুঁজতে সাহায্য করতাম৷ কিন্তু তারপর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের একটা পোস্ট দেখি৷ দিল্লিতে মাতৃদুগ্ধ খুঁজছে৷ তারপরই আমাদেরও মনে হয় কলকাতায় এমন হবে না কেন?' প্রথমদিকে এই দুই তরুণীও অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু এ রকম কিছু কলকাতায় নেই৷ এমনকি মিল্ক ব্যাঙ্ক নিয়ে বিশেষ সচেতনতাও গড়ে ওঠেনি৷ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেই একমাত্র মিল্ক ব্যাঙ্ক রয়েছে৷ তাও হাসপাতালে ভর্তি শিশুরাই এই ব্যাঙ্কের সুবিধা পায়৷ এই পরিস্থিতিতে এই দুই তরুণী শিশুদের সঙ্গে দুধ ডোনার মায়েদের সংযুক্ত করতেই গড়ে তোলেন এই রিসোর্স নেটওয়ার্ক৷

বৈদেহী বলেন, ‘আসামেও এমন একজন মহিলার খবর পেয়েছিলাম যিনি নিজের ব্রেস্ট মিল্ক দান করতে চান৷ তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, একটি বাচ্চার মা মারা গিয়েছে, তার মাতৃদুগ্ধ লাগবে৷ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, এটা বরাবরের সমস্যা৷ তাই এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাটা জরুরি ছিল৷' চিকিৎসকরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷ তবে দুধ শিশুকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা নিতে হয়৷

 শিশুমঙ্গল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অর্ণব রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা মায়েদের সাজেস্ট করি, বুকের দুধ বের করে সাধারণ তাপমাত্রায় আট ঘন্টা অবধি রেখে দিলে ভাল থাকে৷ ফ্রিজে রাখলে ২৪ ঘণ্টা অবধি থাকতে পারে৷ এটা নিশ্চিত করতে হবে, মহিলাদের থেকে শিশুর শরীরে কোনো রোগের ট্রান্সমিশন যেন না হয়৷'

মাতৃদুগ্ধ দানে আগ্রহী মায়ের তথ্যপঞ্জী তৈরি করা দুই ছাত্রীর পক্ষে মোটেই সহজ কাজ নয়৷ রয়েছে সামাজিক বাধা৷ সেটা অতিক্রম করে ডোনার মায়েরা দুধ দানে এগিয়ে এসেছেন৷ তবু তথ্যপঞ্জিতে এখনো পর্যন্ত যুক্ত ১৭ জন মায়ের নাম গোপন রাখা হচ্ছে৷ সতর্কতা হিসেবে মহিলাদের তিন মাস অন্তর অন্তর এইচআইভি বা হেপাটাইটিস টেস্ট করানো হয় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে৷ এক্ষেত্রে সেতুর ভূমিকা নেওয়া মণিময়ী বলেন, ‘যাঁরা সদ্যোজাত শিশুদের দুধের জন্য আমাদের কাছে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে দুগ্ধদানে আগ্রহী মায়েদের যোগাযোগটাই করিয়ে দিচ্ছি৷ তারপর ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে সকলে এগোচ্ছেন৷' অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দুগ্ধদান করার পরে স্তনদাত্রী মায়েদের সন্তানরা দুধ থেকে বঞ্চিত হবে না তো? সংশয় দূর করে ডা. রায় বলেন, ‘এটা চাহিদা ও যোগানের অনুপাত৷ কোনো মা নিয়মিত হারে যদি অন্য বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, তাহলে সেই চাহিদা বুঝে শরীর বেশি দুধই উৎপন্ন করবে৷' এ দেশে মায়ের দুধ বিক্রিও হয়৷

এ বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর প্রাক্তন সভাপতি ডা. অর্জুন মাঙ্গলিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এ দেশে হিউম্যান মিল্কের প্রচুর দাম৷ সাধারণের পক্ষে সেটা কেনা সম্ভব নয়৷ তাই আরো মিল্ক ব্যাঙ্ক হওয়া উচিত ছিল৷ বিষয়টা কেউ ভেবেই দেখেনি৷ প্রাইভেট সেক্টরে টেস্টিং বা পাস্তুরাইজেশনে অনেক খরচ৷ তাই নিয়ম ও সুরক্ষাবিধি মেনে এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত৷' বৈদেহী, মণিময়ীরা তথ্যপঞ্জি তৈরির সময় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নতুন মায়েদের৷ তাঁরা বলেন, ‘ডাক্তারদের উপদেশ মেনেই যাঁরা নতুন মা হয়েছেন, তাঁদেরই ডোনার হিসেবে রাখছি৷ মেডিকেল হিস্ট্রিও নিয়ে রাখি৷ অনেকেই আসেন, তবে এলিজিবল সবাই হন না৷' অতিমারির পরিস্থিতিতে শিশুর কাছে দুধ দানে আগ্রহী মহিলার পৌঁছে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে৷ যাতে উভয়ের বাসস্থল কাছাকাছি হয়, সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে৷

বাংলার মুখ খবর

Latest News

লম্বা মানুষের শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধে সহজে, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘আমি মরতে চাই’, রেললাইন থেকে সরতে নারাজ কিশোরী, ট্রেন থামিয়ে জীবন বাঁচালেন চালক গতবার অনুদান পাওয়া পুজো কমিটির মধ্যে এখনও টাকার আবেদন করেছে ২৪%, আরজি করের জের? 'আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগাতে আসিনি'! 'গো ব্যাক' শুনে প্রতিক্রিয়া অগ্নিমিত্রার মালাইকার বাবার মৃত্যু, প্রাক্তন শ্বশুরবাড়িতে আরবাজ, ঘটনাস্থলে অর্জুনও, তারপর? ইন্টারনেটে ভাইরাল ঘি চা, কেন খাবেন এই চা? কী উপকার পাবেন আপনি গ্রেটার নয়ডার মাঠটা আমরাই বেছে নিয়েছিলাম: আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের U-Turn ১০জন WBCS অফিসারকে IAS মর্যাদা দিল রাজ্য সরকার, সবুজ সংকেত দিয়েছিল কেন্দ্র 'আগে প্রশাসন মেরুদণ্ড সোজা করুক, তার পর আমাদের দিকে আঙুল তুলবেন' বাংলা তথা ভারতীয় টেবিল টেনিসের নক্ষত্রপতন, প্রয়াত কিংবদন্তি কোচ জয়ন্ত পুশিলাল

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.