সিপিএমের যুব সংগঠনের ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন ‘বৃদ্ধ’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অসুস্থ শরীরে এখন আর দলের হয়ে সক্রিয় ভাবে প্রচারে যেতে পারেন না। তবে রাজ্যের বামপন্থীদের মনে এখনও তাঁর জন্যে রয়েছে একটি বিশেষ স্থান। তাই তো যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে বার্তা পাঠান ‘বৃদ্ধ’ বুদ্ধদেব। বাম কর্মীদের সামনে হয়ত বা বুদ্ধবাবু নেই। তবে এই কয়েকদিন আগেই রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর মহম্মদ সেলিম বুদ্ধবাবুর ফ্ল্যাটে পৌঁছেছিলেন। তা থেকেই বোঝা যায়, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বুদ্ধবাবুর কদর এখনও কতটা। (আরও পড়ুন: কংগ্রেসের ‘মাথা ব্যথা’র কারণ রাহুল! সোনিয়া পুত্রের মন্তব্যে ‘কঠিন’ ২৪-এর পথ)
দীর্ঘ কয়েক দশকের অপ্রতিরোধ্য বামেরা বাংলায় এখন শূন্য। এই আবহে নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সংগঠনকে। দলে তারুণ্যের আমদানি করতে জায়গা ছাড়ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের মতো প্রবীনরা। তবে ৭৮ বছর বয়সি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখনও বামেদের ‘চোখের মণি’। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ব্রিগেড সমাবেশের আগে বুদ্ধবাবুর অডিয়ো বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল দলের তরফে। যে বামপন্থা ব্যক্তি ক্যারিশ্মার ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের কথা, দলের কথা, সংগঠনের কথা বলে... সেই সিপিএম-এর কর্মী, সমর্থকরা কিন্তু আজও ব্যক্তি বুদ্ধদেবের মায়াজালে আবদ্ধ।
২০০০ সালের আগে পর্যন্ত রাজ্যে বামপন্থীদের আইকন ছিলেন জ্যোতি বসু। তাঁর পরে আসেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর নেতৃত্বে ২০০১ এবং ২০০৬ সালে খুব সহজেই বামেরা ক্ষমতা দখল করে। সিপিএমের অন্দরে কান পাতলে আজও শোনা যায়, দলে বিমান বসু, অনিল বসুর মতো নেতারা ছিলেন বটে, তবে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্যক্তি ক্যারিশ্মার ধারের কাছে কেউ আসেন না। পাশাপাশি এখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রয়েছে মানুষের মনে। তাই দলের নেতা-কর্মীরাও তাঁকে আইকন মনে করেন এখনও... মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর ১১ বছর পরও। যে সিঙ্গুর বুদ্ধদেবকে গদিচ্যুত করেছিল, আজকের যুব সমাজের একাংশ মনে করে সেই সিঙ্গুল হলে রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাব থাকত না। সেই আবেগকেও রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগাতে চায় সিপিএম।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে বামেরা যুব নেতাদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্বকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেওয়ার মতো কোনও নেতা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসন থেকে শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাম প্রার্থী হয়েছিলেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। আবার সিঙ্গুর থেকে বাম প্রার্থী হয়েছিলেন এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য। তবে ভোটে শূন্য পেলেও ময়দানে ‘রেড ভলান্টিয়ার’রা প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে সেই প্রশংসা ভোটে রূপান্তরিত হয়নি। এই আবহে সিপিএম-এর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রতীক আজও সেই ‘বৃদ্ধ’ বুদ্ধবাবু। সম্প্রতি পদ্ম ভূষণ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান বাম নেতা-কর্মীদের চোখে বুদ্ধবাবুর প্রতি সম্মান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আজও যুবদের সম্মেলে বার্তা পাঠান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজও তাঁর দেখানো পথেই হাঁটতে চান যুব নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে ঘরবন্দি বুদ্ধদেব। তবে তিনি দলের খোঁজ রাখেন নিয়মিত। রাজনীতি থেকে দূরে সরলেও দল থেকে দূরে সরেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।