ব্রিগেডের ভিড়টাই যেন নেমে এসেছিল রাজপথে। চারদিকে কালোমাথার ভিড়। শববাহী শকটটা নিয়ে যাচ্ছে বাংলার এক সৎ রাজনীতিবিদকে। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসের বাইরেও উপচে পড়া ভিড়। একবার শেষ দেখা দেখতে চান অনেকেই। এই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসের সামনেই তো রোজ এসে দাঁড়াস সাদা রঙের অ্য়াম্বাসাডরটা। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ৯টায়। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসতেন সাদা পাঞ্জাবি পরা মানুষটা। হাতে খবরের কাগজ। এরপর দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে, কিছুক্ষণ বইপত্র পড়ে সোজা রাইটার্স। এটাই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও দিনে দুবার করে পার্টি অফিসে আসতেন তিনি। নিয়ম করে। দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা। সব তো এই পার্টি অফিসে। গোটা বাংলা জুড়ে যখন সিপিএমের দাপট, তখন তো দল চলত এই আলিমুদ্দিন থেকেই। এই আলিমুদ্দিনের প্রতিটি সিঁড়ি জানে ওই সৎ মানুষটাকে।
বাস্তবিকই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পরে ঘুরি ফিরে একটা কথাই উঠে আসছে সততা, আর সততার কথা। বিরোধীরাও একথা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন। বাংলা এক সৎ রাজনীতিবিদকে হারাল।
আর সিপিএম নেতা বিমান বসু হারালেন প্রিয় বন্ধুকে। এবিপি আনন্দে তিনি জানিয়েছেন, শরীর যখন ভালো ছিল, রোজ আসত। ঠিক সাড়ে ৯টায় ঢুকে যেত। তারপর এখান থেকে বের হত ১২-১২.১৫ নাগাদ। কারণ ও স্নান না করে বের হত। মিটিং থাকলে দেরি হত। এটা রোজকার রুটিন। এর কোনও অন্যথা হত না। আবার বিকেলবেলা চলে আসত। ঠিক ৪টের সময় চলে আসত। সাড়ে ৭টায় বেরিয়ে যেত। কখনও ৮টায় বের হত। আর মিটিং থাকলে অন্যরকম হত।
মুখ্য়মন্ত্রী থাকার সময়ও প্রায় একই রুটিন।
বিমান বসু বলেন, একই রুটিন ছিল। মুখ্য়মন্ত্রী থাকার সময় একটু আগে বের হত। আগে রাইটার্স বিল্ডিং। সেখান থেকে খাওয়ার জন্য বাড়ি যেত। চান করে খেয়ে ফের রাইটার্স বিল্ডিং। ৬টা-সাড়ে ৬টায় আসত। কখনও একটু বেশি হত। মানে পার্টি অফিসটা ছিল মন্দিরের মতো, এখানে ছুঁয়েই বাড়ি যেত। কখনও হাতে বই নিয়ে আসত। এখানেই বই পড়ত। গাড়িতে থাকত। নিয়ে এসে পড়ত। বা এখানে থাকত। এখান থেকে পড়ত। জানিয়েছেন বিমান বসু।চলে গেলেন বুদ্ধদেব। আরও একলা হয়ে গেলেন বিমান বসু। দায়িত্ব বাড়ল । সিপিএমকে শক্তিশালী করার গুরুদায়িত্ব।