আজ, শনিবার চার বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থেকে জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস। আর গণনা রাউন্ড যত এগোচ্ছে ততই পিছিয়ে পড়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। এই আবহে বিজেপি এখন ৪–০ হয়ে গিয়েছে। এই ফলাফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শক্তি বৃদ্ধি হল। আর বাংলার রাজনীতিতে আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল নরেন্দ্র মোদীর দল। এই ফলাফলের নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এই কারণগুলি বিজেপি নেতারা মানুন বা না মানুন প্রদীপের তলায় অন্ধকার গাঢ়ই হচ্ছে। সেটা না দেখে এড়িয়ে গেলে আগামী দিনে আরও শোচনীয় পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হবে।
সদ্য লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ধরাশায়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। তার উপর চার উপনির্বাচনেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হল বঙ্গ–বিজেপিকে। আর এটা অস্তিত্ব সংকট হয়ে দাঁড়াল। কারণ বিজেপির প্রথম পরাজয়ের কারণ হল, দলের অন্দরে আদি নেতা, কর্মীদের বাদ দিয়ে নব্যদের বাড়তি সুযোগ দেওয়া। তার ফলে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে এবং কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। দূর থেকে সবাই আছে দেখালেও আসলে কাজ করার লোক নেই। তাই বহু বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। খোদ মানিকতলায় এই ছবি দেখা গিয়েছে। এখন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ছাপ্পার অভিযোগ তুললেও আসল কারণটি স্বীকার করছেন না। সেটা হল—লোক নেই।
চারটি বিধানসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে। তাই বিজেপিকে শূন্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায় বিজেপি ১২টি আসন পেয়েছে। আর তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি আসন পেয়েছে। সেক্ষেত্রে বিজেপির ৬টি আসন কমে গিয়েছে। তারপরও কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। আর উপনির্বাচনে তিনটি আসন হাতছাড়া হয়েছে এই কারণেই। আর মানিকতলা বিজেপির কখনও ছিল না। সেটা জেতার চেষ্টাও দেখা যায়নি। তাই এটি পরাজয়ের দ্বিতীয় কারণ। সবমিলিয়ে ৪–০ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের চারটি বিধায়ক বাড়ল। তাতে বিধানসভায় শক্তিবৃদ্ধি হল।
আরও পড়ুন: মানিকতলায় ব্যাপক ধস নামল বিজেপির, বড় ব্যবধানে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্তি পাণ্ডে
তাছাড়া এই পরাজয় বিজেপির কাছে আরও বড় সেটব্যাক। রানাঘাট, বাগদা এবং রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি সাংসদ পেলেও কাজ করেনি। বরং সাংসদ না পেলেও কাজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই সেই উন্নয়নের কাজ অব্যাহত থাকুক চেয়েছেন মানুষজন। ফলে এই তিনটি আসন পরাজয়ের তৃতীয় কারণ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঔদ্ধত্য। যা মানুষ মেনে নেয়নি। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ধরে ফেলেছেন মানুষজন। তাই উপনির্বাচনের আগে শান্তনু ঠাকুরের ‘সিএএ ক্যাম্প’ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর সব জায়গাতেই প্রকট হয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতা। যা স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করার মতো সংগঠন বিজেপির নেই। এটা অস্বীকার করতে আমাদের লজ্জা নেই। আমরা পারিনি সে ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই ধরনের ফল দলগতভাবে আমাদের প্রত্যাশিত ছিল।’