কয়েক মাস ধরেই লাগাতার ক্লাবের ম্যানেজমেন্টে আমূল পরিবর্তনের চেষ্টা চলছিল। শেষপর্যন্ত ফলপ্রসূ হল সেই চেষ্টা। ক্যালকাটা ক্লাবের ম্যানেজমেন্টের কার্যত খোলনলচে পালটে গেল। সভাপতি-সহ কমপক্ষে ১০ নয়া মুখ ঠাঁই পেল ম্যানেজমেন্টে।
বুধবার ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভার দিন নির্বাচন হয়েছিল। ৩,০০০ জন বৈধ সদস্যের মধ্যে ১,৬০০ জন ভোট দিয়েছিলেন। একটি পৃথক ভোটের মাধ্যমে ১৩ সদস্য-বিশিষ্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির মধ্যে ১১ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। সভাপতি পদের জন্য একইসঙ্গে একটি পৃথক নির্বাচন হয়েছিল। তাতে ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাত সদস্য হেরে গিয়েছেন। প্রথামাফিক সাধারণত বিদায়ী কমিটির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যই সভাপতি হন। কিন্তু তিনিও ভোট জিততে পারেননি। পরিবর্তে ক্লাবের নয়া সভাপতি হয়েছেন বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষ। যিনি আগে কখনও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও ছিলেন না।
তবে রীতিমতো বিতর্কের আবহে সেই নির্বাচন হয়েছিল। উঠেছিল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ। গত ১৪ ডিসেম্বর ‘উইসেলব্লোয়ার’-এর অভিযোগ নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাব চেয়ে চিঠি লিখেছিল কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। ১০ দিনের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যে ক্লাব ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনের নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়।
কেন্দ্রের মন্ত্রকের চিঠিতে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ কমিটির সদস্য নিরুপম হালদারের রিপোর্টের বিষয়টি ছিল। যিনি পুরুষদের পানশালার সংস্কারে খরচ, আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সংস্থায় ৮৬ লাখ টাকার প্রভিডেন্ট ফান্ড লগ্নির মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কয়েকজন প্রবীণ সদস্য-সহ সেই রিপোর্টে সমর্থন জানান ক্লাবের প্রভাবশালী সদস্যদের একাংশ। তার ভিত্তিতে গত ১২ ডিসেম্বর ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবার জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ সভার বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে তিনটি প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। তাতে পাশ হয়েছিল অ্যাকাউন্টগুলির ফরেন্সিক অডিটের প্রস্তাবও। যদিও বিদায়ী কমিটির ন'জন অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
গত বুধবার নয়া দায়িত্ব পাওয়ার পর পার্থ ঘোষ দ্য টেলিগ্রাফকে জানান, ক্লাবের খোলনলচে পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। আর সদস্যরা ঠিক সেটাই করেছেন। এটা সম্পূর্ণ নয়া কমিটি। ক্লাবের ঐতিহ্য এবং সম্মান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে ক্লাবে স্বচ্ছ, সত্ এবং দক্ষ ম্যানেজমেন্ট গড়ে তোলা হবে।
অন্যদিকে ক্লাবের সদস্য এবং ‘উইসেলব্লোয়ার’ সন্দীপ ঘোষ জানান, ক্যালকাটা ক্লাবের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে ঐতিহ্যের পাশাপাশি নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্তু শুধুমাত্র সংস্কৃতির মূলে কুঠারাঘাত করা হয়নি, বরং কোম্পানি আইনের আট নম্বর ধারার আওতায় যে ক্লাব চালানো উচিত, তাও ভুলে গিয়েছিলেন ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা।