ঝাড়গ্রামে হাতি খুন হওয়া নিয়ে এখন তোলপাড় কাণ্ড শুরু হয়েছে। এবার হাতি খুনের কারণ খুঁজতে তার দেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। আর তাতেই শোরগোল শুরু হয়েছে। এই খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিতে বলেছে। বিচারপতিদের নির্দেশ, রাজ্য সরকারের রিপোর্টের কপি মামলাকারীকে দিতে হবে। যাতে মামলাকারী সংশ্লিষ্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখে আগামী দিনে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট পরোক্ষ ভাবে বণ্যপ্রাণ রক্ষায় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব নিয়ে ইঙ্গিত দেয়।
ইদানিং হাতি মেরে ফেলা নিয়ে বারবার খবর সামনে এসেছে। খাবার খোঁজে অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে হাতি। তাতে ফসল নষ্ট হয়। আবার সঞ্চিত খাবার খেয়ে ফেলে গজরাজের দল। তাই মানুষ সরাসরি প্রাণঘাতী আঘাত করছেন। অগস্ট মাসে ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে চারটি হাতি। তাদের তাড়াবার সময় একটি হাতির পিঠে জ্বলন্ত শলাকা ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা নিয়ে বিস্মিত কলকাতা হাইকোর্ট। এই উচ্চ ন্যায়ালয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় কাজ করা তথা পেশায় আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘হাতির প্রতি মানুষের হিংস্র আচরণ আটকাতে প্রশাসনিক উদ্যোগ না থাকায় কিছুদিনের মধ্যে দু’টি হাতি প্রাণ হারিয়েছে।’
আরও পড়ুন: এবার চিকিৎসক পড়ুয়াদের জন্য নয়া ভাবনা ‘অভয়া পাঠশালা’, চালু হয়েছে মেদিনীপুরে
কোনও প্রাণীকেই প্রাণে মারার ঘটনা অপরাধের। আবার হাতি তাড়াতে ‘হুলা পার্টি’র ব্যবহার অবৈজ্ঞানিক বলেও দাবি করেন ওই আইনজীবী। তাই রাজ্য প্রশাসনের সদিচ্ছার উপর জোর দিতে আর্জি জানান আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৩ সালের ১ জুলাই রাজ্যের বন দফতর ঝাড়গ্রামের বদরভুলা রেঞ্জের কাজলা গ্রাম থেকে হাতি ধরে জঙ্গলে ছাড়তে যায়। তখন অসাবধানতার জেরে একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন এই আইনজীবী। সেটার সূত্র ধরেই ঝাড়গ্রাম শহরে হাতি খুনের ঘটনাও এই মামলায় যুক্ত করার আবেদন জানান রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান বিচারপতি এই আবেদন গ্রহণ করেছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি হবে।
আইনজীবী রৈবত বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টেকে একটি কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছেন। ওই কমিটিতে সরকারি–বেসরকারি নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা থাকবেন। আর সেখানে হাতি ধরা বা তাড়াতে অবিলম্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ, হাতি চলাচলের পথের বাধা সরানো, জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় বেআইনি দখলদার রোখা–সহ প্রশাসনকে কয়েকটি নির্দেশ দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের দিন ঝাড়গ্রামে একটি হাতির দল ঢুকে পড়ে। হাতির হানায় তখন লোকালয়ের বিদ্যাসাগর পল্লি এলাকার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাই হাতি যখন তাড়ানো হচ্ছিল তখন একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ছাদ থেকে অন্তঃসত্ত্বা হাতির পিঠে লোহার জ্বলন্ত শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে হাতিটির মৃত্যু হয়।