লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রে সরকার গঠন হয়ে গিয়েছে। আর বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ভাল ফল করেছে। তারপরেও ভোট পরবর্তী হিংসা চলছে বলে অভিযোগ বাংলায়। এই অভিযোগ করেছে বঙ্গ–বিজেপি। আর তাদের দাবি, অন্তত দুর্গাপুজো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হোক বাংলায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখার জায়গা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এবার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা হাইকোর্টে। আজ, মঙ্গলবার কেন্দ্র–রাজ্য উভয়ের কাছেই রিপোর্ট তলব করে কলকাতা হাইকোর্ট জানতে চাইল স্কুলের বদলে কোথায় রাখা যাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী?
এদিকে আগেই দু’পক্ষকে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, অবিলম্বে স্কুল খুলতে হবে এবং দু’পক্ষকে ঠিক করতে হবে কোথায় থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে স্কুল–কলেজ থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কারণ তা না হলে পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এবার নির্দেশ দিয়েছে, স্কুলের বিকল্প হিসাবে কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে সেটা রাজ্য–কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরবর্তী শুনানিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার কী বন্দোবস্ত করা হয়েছে সেই রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়ে দিতে হবে। আগামী ২১ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না, দ্বন্দ্ব ভুলে কাজ করতে হবে, জেলা নেতৃত্বকে বার্তা মমতার
অন্যদিকে ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে রাজ্যে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মঙ্গলবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হবে। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সময়সীমা আরও বাড়ে। আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে বাংলায়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বাহিনী দখল করে রেখেছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়। সেখানে বলা হয়, স্কুল–কলেজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার ফলে পঠনপাঠন লাটে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষের আইনজীবী কুমারজ্যোতি তিওয়ারির সওয়াল, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। এখন ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ৪০০ কোম্পানি অন্য জায়গায় রাখা হয়েছে। পাল্টা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের জবাব, ‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি উঠে গিয়েছে। তাহলে কেন রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার দায়িত্ব নেবে? কেন্দ্রের উচিত দায়িত্ব নেওয়া।’
এই সওয়াল–জবাবে বেশ তপ্ত হয়ে ওঠে এজলাস। আর দু’পক্ষের যুক্তি শুনে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের মন্তব্য, ‘কেন্দ্র–রাজ্য পৃথক মতাদর্শ থাকতেই পারে। কিন্তু শিশুদের কোনও মতাদর্শ নেই। তাদের শিক্ষার কথা আগে ভাবতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে দায় না ঠেলে দু’জনকেই সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে।’ সংবিধানের ২১এ ধারায় শিশুদের শিক্ষার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সেটা যেন লঙ্ঘন না হয় দেখতে বলেছেন বিচারপতি। দুই বিচারপতির বেঞ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা নিয়ে আগামী তিনদিনের মধ্যে দু’পক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।