মুর্শিদাবাদের এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ঘটনায় পণের দাবিতে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন মৃতের বাবা-মা। তবে অভিযোগ, উল্টে পুলিশই তাদের গ্রেফতার করেছিল। এমনকী ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি পর্যন্ত করা হয়নি। তাছাড়া মৃতের শ্বশুরবাড়ি থেকে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেনি পুলিশ। এই সমস্ত নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সিআইডির এডিজি এই ঘটনার তদন্ত করবেন বলে বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঘরে ঢুকতেই বালিশ দিয়ে চেপে ধরেছিল খুনি, বাংলাদেশের সাংসদ খুনে হাড়হিম করা তথ্য়
কী ঘটেছিল?
মামলার বয়ান অনুযায়ী, মৃত গৃহবধূর নাম বান্টি বিশ্বাস। তিনি নদিয়ার ধুবুলিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা নিমাই বিশ্বাসের মেয়ে। বছরখানেক আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মুর্শিদাবাদের আয়েশবাগানের বাসিন্দা মিঠুন দে’র সঙ্গে। অভিযোগ ওঠে, বিয়ের পর থেকেই নানাভাবে টাকা চেয়ে বান্টির উপর অত্যাচার করতে থাকে তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কখনও ব্যবসায়িক ক্ষতি দেখিয়ে, আবার কখনও অন্যান্য অজুহাতে বান্টির বাপের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে টাকা চাইতে থাকে তারা। তবে টাকা দিতে অস্বীকার করায় গৃহবধূর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আদায় করতে অত্যাচার করতে শুরু করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এমনকী গত ৭ এপ্রিল অত্যাচারের কথাও বান্টি তাঁর বাপের বাড়িতে জানিয়েছিলেন। এরপর গত ১০ এপ্রিল শ্বশুরবাড়িতেই তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
গৃহবধূর মেয়ের পরিবারকে তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন ফোন করে জানান, তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এর পরে সেখানে ছুটে যান মেয়ের বাবা মিঠুন। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আরও অভিযোগ, ময়নাতদন্তের সময় মেয়ের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি পরিবারের সদস্যদের। পুলিশ তাদের আটকে রেখেছিল। মৃতার পরিবারের আরও অভিযোগ, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানতে গেলে উল্টে পুলিশই তাদের গ্রেফতার করে। এমনকী পরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্যও তাদের হুমকি দেওয়া হয়। এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বান্টির পরিবারের সদস্যরা।
সেই সংক্রান্ত মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যের আইনজীবীর কাছে যাবতীয় তথ্য জানতে চান। কিন্তু, উত্তর দিতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। এর পরেই তিনি সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচারপতির নির্দেশ, অবিলম্বে পুলিশকে সমস্ত মামলার নথি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এদিকে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মৃতার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। বিচারপতি জানান, মৃতার পরিবার কোনও হুমকি পেলে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হতে পারবে মৃতার পরিবার।