নন্দীগ্রামে বাম আমলে দায়ের হওয়া ১০টি খুনের মামলা সহ ফৌজদারি মামলায় নতুন করে বিচারের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পূর্ব মেদিনীপুরের নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে এই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার এই মামলাগুলি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিল নিম্ন আদালতে। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছিল নিম্ন আদালত। সেই রায় বাতিল করে পুনরায় বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের নেতা নিশিকান্ত খুনে বেকসুর খালাস ৮ অভিযুক্ত
আদালত সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে এবং ২০০৯ সালে জমি অধিগ্রহণ আন্দোলনের সময় নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি থানায় মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে রাজ্য মন্ত্রিসভা এই মামলাগুলি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, যে দরিদ্র ভূমিহারারা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের জীবিকা রক্ষার জন্য তৎকালীন ভূমি নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তাদের কিছুটা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে হয়েছিল। তার জেরেই এই ঘটনা।
উল্লেখ্য, তৎকালীন সরকারের নির্দেশে পুলিশ সেই কৃষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করেছিল। নিম্ন আদালত পরে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে। তবে নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায় বাতিল করে দিয়েছে। রাজ্যের এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি হাইকোর্টের কাছে।
৪৪ পৃষ্ঠার নির্দেশে হাইকোর্ট বলেছে, ‘১০টি ফৌজদারি মামলায় যারা অভিযুক্ত রয়েছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। খুন তো হয়েছেই। কেস ডায়েরি, পোস্টমর্টেম রিপোর্টগুলি এই ধরনের তথ্য একেবারে স্পষ্ট। তাই এখনও পর্যন্ত সমাজে এমন ব্যক্তিরা আছেন যারা এই ধরনের খুনের জন্য দোষী।’ এরপরে হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ‘সিআরপিসির ৩২১ ধারার অধীনে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া জনস্বার্থে ঠিক হবে না। আসলে এটি জনসাধারণের ক্ষতি এবং আঘাতের কারণ হবে।’
প্রসঙ্গত, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং আত্মরক্ষার অধিকারের যুক্তি দেন। তবে সেই যুক্তিকে মান্যতা দেয়নি হাইকোর্ট। বেঞ্চ বলেছে, ‘ফৌজদারি মামলাগুলিতে একাধিক খুনের ঘটনা জড়িত। অভিযুক্তের আত্মরক্ষা সেই সময় কতটা প্রয়োজন ছিল তার জন্য বিচারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আদর্শ সমাজের যেকোনও ধরণের হিংসা দূর করা উচিত সরকারের। গণতন্ত্রে যেকোনও উপায়ে বা যেকোনও আকারে, ভোটের আগে বা পরে, হিংসা বর্জন করা উচিত। কোনও অপরাধকে মান্যতা দেওয়ার এবং রাজনৈতিক ইস্যু দিয়ে ঢেকে দেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টা অসহনীয়।’ হাইকোর্ট আরও বলেছে, যে ১০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা উচিত নয়। বিচারের ভয় ছাড়াই খুনিরা বাইরে ঘুরে বেড়ালে সমাজে শান্তি থাকতে পারে না।