শেক্সপীয়র বলেছিলেন, নামে কী আসে যায়! আসলে যে নামে অনেক কিছুই আসে যায়, সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে কলকাতার প্রখ্যাত বিরিয়ানি বিপণনী 'আর্সালান' কর্তৃপক্ষ। তাই, নিজেদের সুনাম রক্ষা করতে শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাদের।
আদালতও মেনে নিয়েছে, তাদের উদ্বেগ যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। তাই, সংশ্লিষ্ট মামলায় আর্সালান-এর পক্ষেই রায় দিয়েছে আদালত।
নাম নিয়ে ঠিক কী সমস্যা?
আর্সালানের বিরিয়ানি মানেই জিভে জল! এই সুনাম অর্জন করতে আর্সালান কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘ বছর ধরে একনিষ্ঠভাবে ভোজনরসিকদের রসনা তৃপ্ত করতে হয়েছে। তবেই মিলেছে অন্যতম সেরার স্বীকৃতি।
কিন্তু, ইদানীং আর্সালানের সেই সুনাম ভাঙিয়েই মুনাফা লোটার চেষ্টা করছে কিছু সদ্য গজিয়ে ওঠা, কিংবা কয়েক বছরের পুরোনো বিরিয়ানি বিপণনী। এই সব দোকানের নামেও রয়েছে 'আর্সালান' শব্দটি। কিন্তু, আইনের হাত থেকে বাঁচতে সেই মূল শব্দের আগে ও পরে আরও কিছু শব্দ জুড়ে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে।
যেমন - 'নিউ আর্সালান বিরিয়ানি হাউস', 'হাজি আর্সালান বিরিয়ানি', 'কলকাতা আর্সালান বিরিয়ানি' প্রভৃতি। এমনকী, সুইগি, জোম্যাটোর মতো অনলাইন ফুড অ্যাপগুলিতেও এইসব দোকানের রমরমা রয়েছে।
তবে, নামে মিল থাকলেও এইসব দোকানের বিরিয়ানির স্বাদ বা গুণমান - কোনওটাই আসল আর্সালানের ধারেকাছেও যায় না। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করে আর্সালান কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি ছিল, যারা তাদের দোকানের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের দোকানের এই বিভ্রান্তিকর নামগুলি ত্যাগ করতে হবে।
কারণ, এইসব দোকানের সঙ্গে প্রকৃত আর্সালানের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ, যদি কোনও ক্রেতা নাম দেখে বিভ্রান্ত হন, এবং আসল আর্সালান ভেবে সেইসব দোকানের বিরিয়ানি কিনে খেয়ে সন্তুষ্ট না হন বা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে আসল আর্সালানের সুনাম নষ্ট হবে।
আদালত কী রায় দিল?
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে এই মামলা শুনানির জন্য ওঠে। এবং মামলার সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি রায় দেন, একমাত্র প্রকৃত আর্সালান, যাদের ওই নামে প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন এবং নির্দিষ্ট লোগো রয়েছে, তারা বাদে আর কোনও সংস্থা, ব্যক্তি বা দোকান বিরিয়ানি বিক্রেতা বা বিপণন হিসাবে 'আর্সালান' শব্দটি তাদের নামে ব্যবহার করতে পারবে না।
একইসঙ্গে, সুইগি ও জোম্যাটো কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেওয়া হয়, তাদের অ্য়াপে এমন কোনও দোকান বা বিপণনী থাকলে অবিলম্বে সেগুলিকে ছেঁটে বাদ দিতে হবে।
দুর্গাপুজোর মুখে, যখন কলকাতাজুড়ে বিরিয়ানির ব্যবসা তুঙ্গে ওঠে, তখন কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ে স্বভাবতই স্বস্তি ফিরে পেল আর্সালান কর্তৃপক্ষ।