৪ বছর আগে বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন শিক্ষিকা। কিন্তু, সেই আবেদন বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল স্কুল পরিচালক কমিটি। এই অবস্থায় শিক্ষিকার বদলির আবেদন আটকে রাখার জন্য হাইকোর্টের রোষের মুখে পড়ল স্কুল পরিচালন কমিটি। কলকাতা হাইকোর্ট স্কুল পরিচালন কমিটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের সুমতিনগর শরৎকুমার হাইস্কুলের শিক্ষিকা মানসী সর্দারের আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: পোস্ট অফিসে জমা ১২ লক্ষ টাকা ‘গায়েব’, নির্বিকার পুলিশ, CID তদন্তের নির্দেশ
আদালতের নির্দেশ, জরিমানার যে ৫০ হাজার টাকা সেটি স্কুল পরিচালক কমিটি শিক্ষিকাকে দেবে। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে মামলাটি। আবেদন অনুযায়ী, ওই শিক্ষিকা শারীরিকভাবে অসুস্থ। এই যুক্তিতে ২০২১ সালে বদলির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর সেই আবেদনে আমল দেয়নি স্কুল পরিচালন কমিটি। কয়েক বছর ধরে আবেদন ফেলে রাখার পর গত বছর প্রথম পরিচালন কমিটি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু, তাতে পরিচালন কমিটি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে শিক্ষিকা অসুস্থতা সংক্রান্ত কোনও নথি তাঁদের কাছে জমা দেয়নি। তাই সেই আবেদন গ্রহণ করেনি পরিচালন কমিটি।
এদিকে, পরিচালন কমিটির এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন মামলাকারী শিক্ষিকার আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, ২০১৫ সালের আইন অনুযায়ী কোনও স্কুল কমিটি এভাবে শিক্ষকের কাছ থেকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বা ডাক্তারি পরীক্ষার কোনও নথি চাইতে পারে না। যদি প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে কমিটি নিজেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোনও চিকিৎসকে দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু পরিচালন কমিটি নয়, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকেরও এই সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়ার কোনও অধিকার নেই। তাই এ ক্ষেত্রে স্কুল পরিচালন কমিটি নিয়ম মানেনি।
মামলায় আদালত জানিয়ে দেয়, যদি কোনও শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মী অসুস্থতাজনিত কারণে বদলির জন্য আবেদন করেন তাহলে নিশ্চয়ই সেই আবেদন খতিয়ে দেখতে হবে। তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি দেখতে হবে। এই ধরনের আবেদন বছরের বছর ফেলে রাখার মানে হল অমানবিক আচরণ। তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরিচালন কমিটিকে জরিমানা করেছে। আদালত জানিয়েছে, যারা পরিচালন কমিটির সদস্য রয়েছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে এই জরিমানার টাকা দেবেন।
এ বিষয়ে শিক্ষকদের সংগঠন মনে করছে, আদালতের এমন রায় শুধুমাত্র শিক্ষিকার জয় নয়, সেটা সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকার জয়। আদালত এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার ফলে এই ধরনের অন্যায়ের প্রবণতা ঠেকানো যাবে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক জটিলতা বা গাফিলতির কারণে শিক্ষকদের অধিকার গর্ব হবে না। সংগঠনের আরও বক্তব্য, অনেক স্কুল পরিচালন কমিটি এভাবে আচরণ করে থাকে। এর ফলে তাদের আচরণে পরিবর্তন করা সম্ভব।