দুর্গাপুজো সারা বছরে একবার আসে। তাই সরকারি স্তরে ছুটির সংখ্যা বেশি থাকে। এই ছুটি আদালতও পেয়ে থাকে। টানা একমাস ছুটি থাকে আদালতে। কলকাতা হাইকোর্টে এবার থেকে দুর্গাপুজোয় টানা একমাস ছুটির রেওয়াজে কোপ পড়তে চলেছে। একটি চিঠি গোটা বিষয়টি ঘেঁটে দিল। কদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র চার বিচারপতির সই করা একটি সুপারিশ পত্র সামনে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী বছর (২০২৫) থেকে আর টানা একমাস ছুটি থাকবে না কলকাতা হাইকোর্ট। ষষ্ঠীর আগে বন্ধ হবে আদালত। আর লক্ষ্মী পুজোর ঠিক পরদিনই খুলে যাবে কলকাতা হাইকোর্ট। আবার কালীপুজোর সময় দু’দিন ছুটি থাকবে। তার ফলে অন্তত সাতদিনের কর্মদিবস বাড়বে।
এই বিচারপতিদের সই করা চিঠি এখন সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছে। আর তাতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। এমনকী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে পারেন আইনজীবীরা। তেমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। যদিও আইনজীবীদের তিনটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্রোহের আঁচ পেয়েছে বিচারপতিদের কমিটি। কিন্তু তাতেও একমাস ছুটিতে কোপ ফেলার সিদ্ধান্তে অনড় বিচারপতিদের কমিটি। কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিচারপতিদের কমিটি সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্ট বছরে মোট ২২২ দিন হাইকোর্ট খোলা রাখতে বলেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: এবার আরজি কর হাসপাতাল মামলার বিচারপর্ব শুরু হচ্ছে, পেশ হতে পারে দ্বিতীয় চার্জশিটও
তবে আলোচনা করলেও কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। বরং বার অ্যাসোসিয়েশন এবং বার লাইব্রেরি এই ছুটি বাতিলের প্রস্তাবে মোটেও রাজি হয়নি। উলটে ওই বৈঠকে একটি সংগঠন রাম নবমী ও মে দিবসে ছুটি রাখার দাবি তুলেছে। আগে কলকাতা হাইকোর্টে গরমের ছুটি থাকত প্রায় একমাস। গত কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে সেখানে কোপ ফেলেছে সুপ্রিম কোর্টের এই কর্মদিবস বৃদ্ধির ফরমান। এখন সব মিলিয়ে হাইকোর্ট বছরে মোট ২১০ দিন কাজ চলে। সেটাকেই বাড়িয়ে ২২২ দিন করার ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে চারজন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, সৌমেন সেন, জয়মাল্য বাগচি এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর বিশেষ কমিটি তাঁদের সুপারিশ অন্য বিচারপতিদের কাছে পাঠিয়ে মতামত চেয়েছেন। তারপর তা গৃহীত হবে।
এই নিয়ে এখন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আর এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী সপ্তাংশু বসু বলেন, ‘সরকারের আইনজীবীদের কোনও ছুটি নেই। পিএল বা সিএল সবটাই বিচারপতিরা পান। তাই ছুটি কেটে নেওয়া হলে সেটা মেনে নেওয়া হবে না। বরং বৃহত্তর আন্দোলন হবে। সুপ্রিম কোর্টেই তো বছরে ১৯০ দিন কাজ হয়। তাহলে হাইকোর্টের উপরে কোপ কেন? আর কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দলপতির বক্তব্য, ‘শুধু কাজের দিন বাড়ালে মামলার পাহাড় কমবে না। কলকাতা হাইকোর্টে ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলে সেখানে ২২টি পদ ফাঁকা। শুধু ছুটি বন্ধ করে কাজের দিন বাড়ালেই হবে না।’