কলকাতা হাইকোর্টে কর্মসংস্কৃতি নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলে দিলেন দুই বিচারপতি। আর তা প্রকাশ্যে আসতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনকী যে তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে তাতে ক্ষুব্ধ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। গতকাল, শুক্রবার ইষ্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সংস্থার সিএমডি সকাল সাড়ে ১০টায় ওথ কমিশনারের অফিসে যান। সেখানে হলফনামা জমা দিয়ে সই করতে গেলে কোনও অফিসারকে সেখানে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা শুনে বিস্ফোরক বিচারপতি দেবাংশু বসাকের মন্তব্য, ‘কী করে এটা হয়!’
এই ঘটনা নিয়ে বিচারপতিরা লাগাতার প্রশ্ন তুলতে থাকেন। তাতে বিপাকে পড়ে যান কলকাতা হাইকোর্টের অফিসাররা। কারণ তাঁদের জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। কেন একজন উচ্চপদস্থ অফিসার সময় মতো এসেও কলকাতা হাইকোর্টে সই করতে পারবেন না? বিচারপতিরা যদি সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে বসতে পারেন, তবে অফিসারেরা কেন সময় মেনে হাজির হবেন না? প্রশ্ন বিচারপতিদের। এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে তলব করে। পরে আসেন ওথ কমিশনাররাও। এইসব অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। বিচারপতিদের নির্দেশ, কী পদক্ষেপ করা হয়েছে সেটা ৬ অগষ্ট পরবর্তী শুনানিতে জানাতে হবে।
আরও পড়ুন: খাদ্য দফতরে এবার বড় নিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার, থাকছে আকর্ষণীয় বেতন
সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ শুনানিতে ইসিএলের সিএমডি’র হলফনামা কেন নথিবদ্ধ করা হয়নি? এই প্রশ্ন করা হয় তাঁর আইনজীবী তথা কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দলপতিকে। তখনই বোমা ফাটান তিনি। আর সামনে চলে আসে কলকাতা হাইকোর্টের কর্মসংস্কৃতি। শঙ্করবাবু জানান, তাঁর মক্কেল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওথ কমিশনারের ঘরের সামনে হাজির হন। কিন্তু তখন কোনও ওথ কমিশনার সেখানে হাজির ছিলেন না। তাই তিনি সই করে হলফনামা জমা দিতে পারেননি। এটা শুনে বিচারপতিরা তলব করেন রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে। তাঁরা দাবি করেন, সবাই না থাকলেও দু’জন ওথ কমিশনার হাজির ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দেখতে পাননি ওই অফিসার।
আদালত সূত্রে খবর, এটা শুনেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের প্রশ্ন, ‘তার কোনও প্রমাণ আছে? সিসিটিভির ফুটেজ দেখান।’ ওখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই জানানো হলে বিচারপতি বলেন, ‘একজন চেয়ারম্যান মিথ্যে বলছেন এটা মনে করার কোনও কারণ নেই।’ অনেক আইনজীবীরাও বলছেন, কোনওদিনই বেলা ১১টার আগে ওথ কমিশনাররা আসেন না। এরপরই বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বক্তব্য, ‘প্র্যাকটিস থেকে দেখছি আমাদের মান পড়ে যাচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট মণিমাণিক্যে ভরা। তার একটি যদি হয় সাড়ে ১০টায় কর্মবিরতি করে দেওয়া, তবে অন্যটি এখানকার আইনজীবী, বিচারপতি, কোর্ট অফিসারদের সময়–জ্ঞানের অভাব। আপনারা শৃঙ্খলা মেনে চলুন।’