মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা। আর তাতে দেওয়া নম্বর নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক পড়ুয়া কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে দিয়েছে। তখনই ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। তারপর তা আসে কলকাতা হাইকোর্টে। ওই খাতা দেখে রীতিমতো বিস্ময়প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। আর তাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কারণ ওই খাতা দেখে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘সাধারণ চোখেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি।’ বিচারপতির এই মন্তব্যের পর গোটা এজলাসে অস্বস্তিতে পড়ে যায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
এমনটা যে হতে পারে তা কেউ কল্পনা করেননি। মাধ্যমিকের ওই পরীক্ষার্থী মামলা না করলে ওই নম্বরই তার জীবনের সঙ্গে জুড়ে যেত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে ১১ নম্বর কম দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে এক পড়ুয়া। তার অভিযোগ, খাতায় নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। বরং পরীক্ষক বিস্তর কাটাকুটি করেছেন। আর গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য ওই খাতা দেখে বলেন, ‘সাধারণ চোখে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। চার নম্বর কম দেওয়া হয়েছে চোখে পড়ছে।’ আর তখনই মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বিচারপতির নির্দেশ, ওই পরীক্ষার্থীর খাতা অন্য কোনও পরীক্ষককে নিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। আর জীবনবিজ্ঞানের প্রধান পরীক্ষককে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশের ওসির বিরুদ্ধে অভিনেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, বেগবাগানে আলোড়ন
ভরা এজলাসে তখন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ এই নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি হয়েছে তা সামনে চলে আসে। পড়ুয়াদের জীবনের প্রথম পরীক্ষায় যদি নম্বর নিয়ে গরমিল হয় তা পরবর্তী ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে। সেক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সঙ্গে খাতা দেখা উচিত বলে মনে করে আদালত। আর এই পড়ুয়ার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। তার পক্ষের আইনজীবী সুনীতকুমার রায়। নন্দীগ্রামের একটি স্কুল থেকে এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় ওই পরীক্ষার্থী। রিপোর্ট কার্ড হাতে আসতে দেখা যায়, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় জীবনবিজ্ঞানের প্রাপ্ত নম্বর কম। বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৯, অঙ্কে ৯৯, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৯৫ এবং ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে ওই পরীক্ষার্থী। তবে জীবনবিজ্ঞানের প্রাপ্ত নম্বর ৮২। এখানেই খটকা লাগে ওই পরীক্ষার্থীর।
ওই খটকা লাগা থেকেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে পড়ুয়া। ওই পরীক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারেননি। কিন্তু সুস্থ হয়ে মামলাটি করে। তবে তার আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর আবেদন করে ওই পড়ুয়া। যা গ্রাহ্য করেনি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তখন আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় পড়ুয়াকে। তারপর কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ওই পরীক্ষার্থীর জীবনবিজ্ঞানের খাতা আদালতে দেখাতে হবে। আদালতে জমা পড়ে ওই খাতা। আর ওই খাতা দেখে অবাক হন বিচারপতি। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে একটি হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। একমাস পর মামলার পরবর্তী শুনানি।