একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা যদি কারও সঙ্গে, সম্পূর্ণ পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে যথাযথ প্রমাণ ছাড়া সেই মহিলা তাঁর পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন একথা বলা যায় না।
পোক্ত প্রমাণ ছাড়া সেই মহিলা কখনই এমনটা দাবি করতে পারেন না যে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই পুরুষ তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত পুরুষটিকে শাস্তি দিয়েছিল নিম্ন আদালত। কিন্তু, কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সেই রায়ও খারিজ করে দিয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর এই মামলার রায়দান করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে মামলাকারী মহিলার একটি নির্দিষ্ট বয়ানের উপর আদালত গুরুত্ব আরোপ করেছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ হল - অভিযোগকারিণী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি 'স্বেচ্ছায় এবং কোনও রকম প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ ছাড়াই' ওই পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। পরে আবার তিনিই সেই পুরুষ সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।
এই মামলায় ২০১১ সালের ১২ জুলাই একটি রায়দান করে বাঁকুড়া অতিরিক্ত দায়রা আদালত।
সেই আদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এবং তাঁকে ভারতীয় দণ্ড বিধি (আইপিসি)-এর ৩৭৬ (ধর্ষণ) ধারার অধীনে অপরাধী বলে ঘোষণা করে নিম্ন আদালত। সেইসঙ্গে, ওই ব্যক্তিকে শাস্তি হিসাবে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু, উচ্চ আদালত বাঁকুড়ার নিম্ন আদালতের সেই রায় খারিজ করে দিয়েছে।
একইসঙ্গে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা, যিনি স্বেচ্ছায় এবং কোনওরকম প্রতিরোধ ছাড়াই তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, পরবর্তীতে তিনি এভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারেন না, যদি না তাঁর কাছে এই বিষয়ে পোক্ত কোনও প্রমাণ থাকে।
আদালতের আরও বক্তব্য, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা একটা 'কনসেপ্ট'। যেটা এভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ব্যবহার করতে পারেন না।
এই মামলায় নিম্ন আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে যে কারাবাসের সাজা শুনিয়েছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, ইদানীংকালে এমন বহু ধর্ষণের মামলা দেখা যায়, যেখানে অভিযুক্ত পুরুষের বিরুদ্ধে বিয়ের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করা হয়।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সেই ধরনের মামলাগুলিতে কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের উল্লেখ আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।