মুর্শিদাবাদে রামনবমীর হিংসায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ১৩ জুনের মধ্যে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। এরই সঙ্গে উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের পর্যবেক্ষণ, 'যত সময় যাবে, ততই এই ঘটনায় তথ্য প্রমাণ বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।' উল্লেখ্য, রামনবমীর হিংসার ঘটনায় সিআইডি তদন্ত শুরু করেছিল। তবে এই হিংসার ঘটনায় সিবিআই এবং এনআইআ-কে তদন্তভার দেওয়ার জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই শুক্রবার এহেন পর্যবেক্ষণ করেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি রাজ্যের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিল। এই আবহে রামনবমীর হিংসা মামলায় হাই কোর্টের এহেন পর্যবেক্ষণ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এর আগে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আদালতে দাবি করা হয়েছিল, রামনবমীতে 'ছোটখাটো ঝামেলা' হয়েছিল মাত্র।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে রামনবমী হিংসার ঘটনাতেও তদন্তভার এনআইএ-কে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ২০২৪ সালের হিংসার ঘটনাতও তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনআইএ-কে। এর আগে এবছর রামনবমীতে মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় এনআইএ-কে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা করতে বলেছিল হাই কোর্ট। সেই রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই শুক্রবার এই মামলার তদন্তভার পুরোপুরি এনআইএ-কে দেওয়ার নির্দেশ দেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৩ জুন। সেদিন এনআইএ-কে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের রামনবমীতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর বিধানসভার শক্তিপুর এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছিল দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। অভিযোগ করা হয়, রামনবমীর মিছিলে হামলা করা হয়েছিল। ছাদ থেকে মিছিল লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টে দু'টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে এই ঘটনার তদন্তবার সিবিআই এবং এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। এর আগেও এই মামলার শুনানির সময় অসন্তোষ ঝড়ে পড়েছিল প্রধান বিচারপতির গলায়। বহরমপুরে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির সেই সময় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যেখানে মানুষ ৮ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের উৎসব পালন করতে পারেন না, সেখানে ভোটের কোনও প্রয়োজন নেই। আর এবার তিনি এনআইএ-কে এই মামলার তদন্তভার দিয়ে দ্রুত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিলেন। পাশাপাশি জেলাশাসককে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোনও সম্প্রদায়কে প্ররোচিত করার মতো কোনও বক্তব্য যাতে রাজনীতিবিদরা না দেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।