এজলাসে না ডেকে একটি জামিন সংক্রান্ত মামলায় নিজের চেম্বারে পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারক। পরপর তিন বার তিনি এ নিয়ে পুলিশ সুপারকে তলব করেছিলেন। কিন্তু, প্রত্যেকবারই হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন পুলিশ সুপার। তাঁর বক্তব্য বিচারকের এভাবে তলব করা এক্তিয়ার বহির্ভূত। শেষ পর্যন্ত বিচারকের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই পুলিশ সুপার। সেই সংক্রান্ত মামলায় বিচারকের সেই নির্দেশকে খারিজ করে দিল হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারক আইন মেনে কাজ করেননি বলে মন্তব্য করছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ।
আরও পড়ুন: চাকরিতে রূপান্তকামীদের জন্য ১% সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, বড় নির্দেশ হাইকোর্টের
জানা যাচ্ছে, ঘটনাটি মালদার চাঁচোল আদালতের। সেখানকার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। পুলিশ সুপারের অভিযোগ, এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে তাঁকে তলব করা হয়েছে। তাঁর আইনজীবী এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্র ঘোষের এজলাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাতে সাড়া দেন বিচারপতি। শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট বিচারকের নির্দেশ খারিজ করে দেয়।
জানা যাচ্ছে, একটি জামিনের মামলায় অসন্তুষ্ট হয়ে বিচারক পুলিশ সুপারকে তিন তিনবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন নিজের চেম্বারে। প্রথমে ১৪ মে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, হাজিরা দেননি পুলিশ সুপার। এর পর ২০ মে ও ৪ জুন পুলিশ সুপারকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠান বিচারক। উল্লেখ্য, জামিন সংক্রান্ত ওই মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণ করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারক। বারবার বিচারকের এভাবে ডেকে পাঠানোর নির্দেশকেই খারিজ করেছে কলকাতায় হাইকোর্ট। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ মন্তব্য করেছেন, বিচারক যেভাবে পুলিশ সুপারকে ডেকে পাঠিয়েছেন তা তাঁর এতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আরও পর্যবেক্ষণ, নিম্ন আদালতের এরকম নির্দেশ স্পষ্ট নয়, কোন আইনে পুলিশ সুপারকে নিজের চেম্বারে বিচারক ডেকে পাঠিয়েছেন তা আদালতের কাছে অস্পষ্ট।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের ওপর নজরদারির জন্য বিচারকদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিতে পুলিশ সুপারসহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরাও থাকেন। সেক্ষেত্রে বিচারক সেখানেও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এরপরে নিম্ন আদালতের তিনটি হাজিরার নির্দেশ খারিজ করে দেন বিচারপতি। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারক যেন ভবিষ্যতে আইন মেনে কাজ করেন তা নিয়েও সতর্ক করে হাইকোর্ট।