কোনও বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হলে অবশ্যই সেই বাড়ির বাসিন্দাদের অনুমতি নিতে হবে। তাঁর বা তাঁদের অনুমতি না নিয়ে কখনই সেই বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো যেতে পারে না। কারণ, তাতে বাড়ির বাসিন্দাদের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়।
একটি মামলার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট মামলায় এক মহিলা অভিযোগ করেছেন, আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্বামী তাঁদের বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছেন।
মহিলার দাবি, ওই বাড়ির মালিকানা যৌথভাবে তাঁরও রয়েছে এবং তিনি সাধারণত ওই বাড়িতেই থাকেন। এই অবস্থায় আদালতের বক্তব্য হল, মহিলা যদি মনে করেন, তিনি ওই বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলবেন, তাহলে তিনি সেটা করতেই পারেন। তাঁর সেই কাজ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, 'যদি ওই মহিলা সেখানেই (ওই বাড়িতেই) থাকেন, তাহলে তিনি ওই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি অকেজো করে দিতেই পারেন।'
এমনকী, বিচারপতি স্থানীয় টালিগঞ্জ থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন, যাতে তাঁরা দেখেন, সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি খুলতে বা অকেজো করতে মহিলার কোনও সমস্যা না হয়।
গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলাটির শুনানি চলছিল। মামলাটি রুজু করেছিলেন এক মহিলা। যিনি একজন পেশাদার অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী।
ওই মহিলার দাবি, স্বামীর সঙ্গে ঝামেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি টালিগঞ্জের একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। যেটির যৌথ মালিকানা তাঁর নামেও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একইসঙ্গে, মহিলার অভিযোগ, তাঁর স্বামী জালিয়াতি করে ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা তাঁর বোন, অর্থাৎ - মহিলার ননদের নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছেন।
মহিলার আরও অভিযোগ, স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা লাগাতার তাঁর উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন।
মহিলার আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, এই প্রেক্ষাপটে মহিলার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে তাঁর স্বামী সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এর পাশাপাশি, বারতোল্লায় মহিলার যে শ্বশুরবাড়ি রয়েছে, সেটিও আদতে একটি ফ্ল্যাট, সেই ফ্ল্যাটেও মহিলার শোওয়ার ঘরের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহিলার আরও অভিযোগ, তিনি ও তাঁর স্বামী যৌথভাবে টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। সেই হিসাবে ফ্ল্যাটের যৌথ মালিকানা তাঁর থাকার কথা। কিন্তু, সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামী বেআইনিভাবে সেই ফ্ল্যাটের মালিকানা তাঁর বোনের নামে করে দিয়েছেন।
মামলাকারীর দাবি, তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁকে 'তাঁর সম্পত্তি এবং তাঁর বিবাহিত অধিকার' - এই দুই থেকেই বঞ্চিত করছেন।
অন্যদিকে, মহিলার স্বামী লাগাতার আদালতে দাবি করেন, ওই ফ্ল্যাট আসলে তাঁর বোনের এবং তাঁর বোন সেখানেই থাকেন। তাই, বোনের সম্মতি নিয়েই তিনি ওই ফ্ল্যাটে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। যদিও টালিগঞ্জ থানার পুলিশের দাবি, ওই ফ্ল্যাটে মামলাকারী মহিলা থাকেন। অভিযুক্ত যুবকের বোন নন।
এরপরই বিচারপতি ওই যুবকের উদ্দেশে বলেন, 'আপনার সম্পত্তি আপনারই। আমি তাতে কোনও হস্তক্ষেপ করছি না। কিন্তু, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হলে বাসিন্দার অনুমতি লাগবে। আপনি কারও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন না। টালিগঞ্জ থানার রিপোর্টেই বোঝা যাচ্ছে, ওই সম্পত্তিতে মামলাকারী মহিলা থাকেন।'
যদিও তাঁর নির্দেশিকায় বিচারপতি ঘোষ স্পষ্ট করে দেন, এক্ষেত্রে আদালত কেবলমাত্র ওই টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট নিয়েই কথা বলছে। এখানে মহিলার মূল শ্বশুরবাড়ি, অর্থাৎ - বারতোল্লার ফ্ল্যাটের কথা বলা হচ্ছে না। কারণ, মহিলা মূলত টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটেই থাকেন।