সরস্বতী পুজো করতে না দেওয়ার অভিযোগ এবং পরবর্তীতে আদালতের হস্তক্ষেপের পর সরস্বতী পুজো করা - কিছু দিন আগেই এ নিয়ে উত্তপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল' কলেজ। দোল উৎসবের আগে আবারও ফিরল সেই পরিস্থিতি। আবারও অভিযোগ উঠল, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সাব্বির আলির মদতে বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে অশান্তি ছড়িয়েছেন। জোর করে কলেজের পড়ুয়াদের গায়ে রং মাখানো হয়েছে। এমনকী, সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধিকেও হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) দিনভর অনেক জলঘোলা হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এদিন (১৩ মার্চ, ২০২৫) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে স্থানীয় চারু মার্কেট থানার ওসি বা ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে আদালতে তলব করেন বিচারপতি বসু।
সংশ্লিষ্ট মামলাটি রুজু করেছেন কলেজেরই এক ছাত্র। বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন সেই মামলাকারীর আইনজীবী অর্ক নাগ। উপস্থিত ছিলেন ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আলির আইনজীবী পার্থসারথী বর্মন। এছাড়াও, যোগেশচন্দ্র কলেজের তরফেও আদালতে এক আইনজীবীকে নিয়োগ করা হয়।
সাব্বির আলির আইনজীবী আদালতকে জানান, বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে পড়ুয়াদের জোর করে রং মাখিয়েছেন বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি সেখানে উপস্থিতও ছিলেন না। যদিও মামলাকারীর আইনজীবীর পালটা দাবি ছিল, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা সকলেই সাব্বির আলির 'ঘনিষ্ঠ'।
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি বসুর পর্যবেক্ষণ হল - ঘটনার সময় যদি সাব্বির আলি সেখানে নাও উপস্থিত থাকেন, কিন্তু যদি দেখা যায় অভিযুক্তরা তাঁরই ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাহলে সেই সংগঠনের নেতা হিসাবে সাব্বির আলি দায় এড়াতে পারেন না। এই ঘটনার ফলে যদি কলেজের কোনও বর্তমান পড়ুয়া নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাহলেও সাব্বিরের দায় থেকে যায়।
এরপর মামলাকারীর আইনজীবী জানান, বহিরাগতরা রঙের সঙ্গে লঙ্কা, হলুদ, ধনে প্রভৃতি মশলার গুঁড়ো জলে গুলে তা ছাত্রছাত্রীদের গায়ে ঢেলে দিয়েছিলেন! আইনজীবী অর্ক নাগের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এই ঘটনা 'কভার' গেলে তাঁরাও আক্রান্ত হন এবং তাঁদের রং দেওয়া ও মারধর করা হয়। অর্ক নাগের আরও দাবি, সেই সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও কোনও এফআইআর করা হয়নি।
ওই কলেজে পাশ করে যাওয়া ছাত্রদের একাংশ সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। এবং তাঁরা সকলেই সাব্বিরের গোষ্ঠী বলে দাবি করেন তিনি।
এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, একটি কলেজে কোনও ছাত্র কীভাবে ১১ বছর ধরে থাকতে পারেন। তিনি যদি পাশ করে যান, তাহলে তো তিনি তখন থেকেই কলেজের বাইরের লোক হয়ে যান। এঁরা কীভাবে এখনও নিয়মিত কলেজে ঢোকেন? কারণ, এঁরা তো এখন সত্যিই বহিরাগত।
এই ঘটনায় সরাসরি পুলিশ প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের আইনজীবী। তিনি স্পষ্ট জানান, তাঁরা বহিরাগতদের দাপাদাপি নিয়ে আগেই স্থানীয় চারু মার্কেট থানাকে জানানো হয়েছে। একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এর ফলে বাধ্য হয়েই কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের ভিতর বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তাকর্মীদের মোতায়েন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত চারু মার্কেট থানার ওসি-কে আদালতে ডেকে পাঠান বিচারপতি বসু।