ট্রেনে সিট রাখাকে কেন্দ্র করে বচসা। তার জেরে মহিলাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল এক সহযাত্রী। সেই ঘটনায় অভিযুক্তর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। এর আগে শিয়ালদা আদালত অভিযুক্ত মহিলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশে হস্তক্ষেপ না করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘মহিলাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই ট্রেন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: আবার নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন, বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলল শাসক দল
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালে লক্ষীকান্তপুর লোকালের মহিলা কামরায়। মৃত মহিলার নাম পদ্মাবতী মণ্ডল। অন্যদিকে, অভিযুক্ত যাত্রীর নাম সৌদামিনী। জানা যায়, তারা দুজনেই ট্রেনে নিত্যযাত্রী ছিলেন। সিট রাখা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই তাদের মধ্যে ঝগড়া হত। আর সেই বচসা চরমে পৌঁছয় ওই বছরের ১০ মে। আদালত সূত্রের খবর, তারা একসঙ্গে লক্ষীকান্তপুর লোকালে উঠেছিলেন শিয়ালদা স্টেশন থেকে। সেই সময় সিট রাখা নিয়ে পদ্মাবতীর সঙ্গে সৌদামিনীর তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। তাতে সৌদামিনীর পক্ষে সরব হন দুর্গা নামে আরও এক সহযাত্রী। এরপর শিয়ালদা স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে দেয়। কিন্তু, তারপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া কমেনি। দু'পক্ষের কথা কাটাকাটি চলতে থাকে।
পরে ট্রেনটি জয়নগর স্টেশনে পৌঁছালে ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখি হন পদ্মাবতী। তাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা মারা হয়। ঘটনায় তিনি জয়নগর স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে পড়ে যান। তাতে গুরুতর জখম হন পদ্মাবতী। তখন স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে পদ্মাবতী জানিয়েছিলেন, প্রথমে দুর্গা তার চোখে তরল জাতীয় কিছু স্প্রে করে। এরপর সৌদামিনী তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পরে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী দেন আরও এক সহযাত্রী।
পরে মামলা শুরু হয় শিয়ালদা আদালতে। এদিকে, পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আগেই সৌদামিনীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সমস্ত কিছু তথ্য প্রমাণ এবং সাক্ষ্য খতিয়ে দেখে সৌদামিনীকেই মূল দোষী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয় শিয়ালদা আদালত। পরে তিনি সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে কলকাতা হাইকোর্ট শেষ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে।