ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে কর্মরত পাক নাগরিক! কিছুদিন আগে এই খবর প্রকাশ্যে আসায় তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। ওই ব্যক্তি কি পাক গুপ্তচর? এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তা নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাক গুপ্তচর সংস্থার যোগ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার গোটা ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে চায় সিবিআই। তাই কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, তারা এফআইআর দায়ের করে চক্রের গভীরে ঢুকতে চায়। পাক গুপ্তচরদের জাল কতদূর ছড়িয়েছে সেটা জানা খুব প্রয়োজন বলেই তারা মনে করছে।
এই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একটা অসাধু চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন হুগলির ত্রিবেণীর মগরা থানা এলাকার বাসিন্দা বিষ্ণু চৌধুরী। এদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় নথি জাল করে পাকিস্তানের নাগরিকদের ভারতীয় সেনায় নিয়োগ করিয়ে দেওয়া পর্যন্ত হাত রয়েছে তাদের। এমনকী মোটা টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনীর চাকরি বিক্রি হচ্ছে। এটা একটা বড় চক্র। জয়কান্ত কুমার এবং প্রদ্যুম্ন কুমার নামে পাকিস্তানের দুই নাগরিক এখনও ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে কর্মরত বলে দাবি বিষ্ণু চৌধুরীর। এই দু’জন পাকিস্তান থেকে এসে সংশ্লিষ্ট চক্রের মাধ্যমে নথি জাল করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের স্টাফ সিলেকশন কমিশন পরীক্ষা দিয়ে সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়েছেন বলে বিষ্ণুবাবুর অভিযোগ।
তারপর ঠিক কী হল? এই গোটা ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। তবে যেহেতু দেশের নিরাপত্তা সরাসরি জড়িত এই ঘটনায় সেহেতু বলে সিআইডির পাশাপাশি সিবিআইকেও তদন্ত করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা। তবে এখন মামলাটি শুনছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তাঁর এজলাসেই বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয় সিআইডি। আর সিবিআই জানায়, অভিযোগের সারবত্তা মিলেছে। তাই তারা এফআইআর দায়ের করে গভীরভাবে তদন্ত করতে চায়। আগামী সোমবার আবার মামলার শুনানি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ও মাছ ফেরিওয়ালা একটু শুনবেন’, ভিক্ষুক থেকে উপার্জনের স্বপ্নপূরণ নন্দীগ্রামের জয়দেবের
আর কী জানা যাচ্ছে? সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে সিআইডি যে তথ্য পেয়েছে তা ঘুম উড়ে যাওয়ার মতো। তবে উত্তরপ্রদেশ, অসম, বিহার–সহ একাধিক রাজ্যে এই চক্র সক্রিয় বলে তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দিতে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট যেখানে জাল করা হয়, সেই ছাপাখানা চিহ্নিত হয়েছে। সুতরাং এই চক্রের জাল ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে আর সীমাবদ্ধ নেই। তা অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। সেটারই তদন্ত করতে চাইছে সিবিআই। তবে এই অভিযোগ যেহেতু বিষ্ণু চৌধুরী বলে একজন সাধারণ নাগরিক করেছেন, তার জন্য বিচারপতি হুগলির পুলিশ সুপারকে (গ্রামীণ) নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।