শুধুমাত্র একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক যথার্থ অর্থেই তাঁর কর্তব্য পালন করেছিলেন বলে আরজি করের ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়নি! তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৯ অগস্ট সকালে হাসপাতালের তরফে একটি ফোন পেয়েছিলেন নিহত তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মা। সেই ফোনে তাঁদের জানানো হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন!
সূত্রের দাবি, ওই ঘটনাই প্রমাণ করছে, ততক্ষণে ধর্ষণ ও খুন ধামাচাপা দেওয়ার খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল! সিবিআই গোয়েন্দারা নাকি এমনটাই মনে করছেন।
সিবিআই সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে যে তথ্য সামনে আসছে, তা হল - আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী, পুলিশের কয়েকজন আধিকারিক এবং নিচুতলার কিছু পুলিশকর্মী - এঁদের সকলের ভূমিকাই যথেষ্ট সন্দেহজনক!
আসলে প্রথমেই ঠিক করা হয়েছিল, কিছুতেই ধর্ষণ ও খুনের আভাস কাউকে দেওয়া যাবে না। তার জন্য যা যা করা দরকার ছিল, তাই করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। এবং সেটা করা হয়েছিল, কোনও এক বা একাধিক পাকা মাথার নির্দেশ।
কিন্তু, ঘটনা জানাজানি হতেই নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বন্ধুরা কর্তৃপক্ষের উপর চাপ দিতে শুরু করেন। মূলত তাঁদের চাপেই ময়নাতদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়। সেই দলে আরজি করের চিকিৎসকদের পাশাপাশি অন্য হাসপাতালের কোনও এক তুলনামূল অনভিজ্ঞ চিকিৎসককে সদস্য করা হয়।
সিবিআই সূত্রে দাবি, এই পদক্ষেপের নেপথ্যে একটাই উদ্দেশ্য ছিল। তা হল - ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ইচ্ছা মতো তৈরি করা হলেও কেউ যাতে প্রতিবাদ না করেন!
কিন্তু, তদন্তে উঠে এসেছে, যে চিকিৎসকরা সেদিন ময়নাতদন্ত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন বেঁকে বসেন। তিনি জানিয়ে দেন, এটা মোটেও তাঁর আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। এবং তিনি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার তত্ত্ব লিখবেন না! ফলত, বাকিরা ফাঁপড়ে পড়ে যান।
ওই চিকিৎসক নিজের মোবাইলে মৃতার শরীরের একাধিক আঘাতের ছবি তুলে রাখেন। যার জেরে পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করানো হয়।
ইতিমধ্যেই ওই চিকিৎসকের মোবাইলে তোলা সেইসব ছবি সিবিআই গোয়েন্দারা দেখেছেন এবং সেগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষাও করানো হয়েছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, কেবলমাত্র এই একজন চিকিৎসক তাঁর কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকার ফলেই আরজি করের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানো সম্ভব হয়। যদিও তা সত্ত্বেও ওই রিপোর্টে কিছু ত্রুটি রেখে দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারীদের আরও অনুমান, আগামী দিনে এই মামলায় ওই একজন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের বয়ান ও সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে।