আরজি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ঠিক কতটা যোগ রয়েছে অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের? আপাতত এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। কারণ, পলিগ্রাফ পরীক্ষায় সন্দীপের দেওয়া উত্তরে 'প্রতারণা'র আভাস পেয়েছেন তাঁরা। যার অর্থ হল, একাধিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেননি অভিযুক্ত সন্দীপ। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তরুণীর চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনে ঠিক কী কী লুকোচ্ছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ? কাকে, কাদের বা কী আড়াল করতে চাইছেন তিনি?
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর আর জি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরবর্তীতে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, গত ৯ অগস্ট সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা সন্দীপকে জানানো হয়েছিল। অথচ, তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বস্তুত, সেটা করতে অযথা সময় অতিবাহিত করা হয়েছে।
দেহ উদ্ধারের দীর্ঘ সময় পর পুলিশে লিখিত অভিযোগ (সাধারণ ডায়ারি) দায়ের করা হলেও কোনও এফআইআর করা হয়নি। এবং সেই অভিযোগটিও সন্দীপ করেননি। করেন মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ। আরও লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সেই অভিযোগপত্রে আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করা হয়। যদিও, মৃতদেহের অবস্থান ও আঘাত দেখে খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছিল, এটি কখনওই আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না।
অন্যদিকে, দেহ উদ্ধারের পর ৯ অগস্ট সকাল ১০টা ৩ মিনিটে টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে ফোন করেন সন্দীপ। বর্তমানে এই অভিজিৎ মণ্ডলও গ্রেফতার হয়ে সিবিআইয়ের হেফাজতে রয়েছেন।
ঘটনার দিন, অভিজিৎকে ফোন করার পর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে এক আইনজীবীর সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন সন্দীপ। অন্যদিকে, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে খবর পাওয়ার পরও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অযথা দেরি করেন অভিজিৎ মণ্ডল। টালা থানায় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে এই ঘটনায় প্রথম একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর (ইউডি) অভিযোগ দায়ের করা হয়।
গলদ আরও আছে। নির্যাতিতাকে চিকিৎসকদের তরফে 'মৃত' ঘোষণা করে দেওয়ার পরও পুলিশের দায়ের করা প্রথম অভিযোগপত্রে লেখা হয়, নিগৃহীতাকে 'অচেতন ও শায়িত অবস্থায়' উদ্ধার করা হয়েছে! সিবিআইয়ের স্পষ্ট অভিযোগ, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ঘটনার নেপথ্যে 'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য অপরিচিত ব্যক্তির যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্র' রয়েছে।
সিবিআইয়ের আরও দাবি, অভিজিৎ মণ্ডল ঘটনাস্থল ঠিক মতো সুরক্ষিত না করাতেই বহু প্রমাণ নষ্ট হয়েছে। যা ইচ্ছাকৃত বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত তথা ধৃত সঞ্জয় রায়কেও টালা থানার তৎকালীন ওসি বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন বলে অনুমান করছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।
ঠিক এই সময়ের মধ্যেই সন্দীপের ভূমিকাও যথেষ্ট সন্দেহজনক ছিল। কারণ, এফআইআর দায়েরে তাঁর আগ্রহ না থাকলেও দ্রুত যাতে নিগৃহীতার দেহ হাসপাতালেরই মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেই বিষয়ে হাসপাতালের কর্মীদের নির্দিষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিগৃহীতার পরিবারও আগেই অভিযোগ করেছিল যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তাড়াতেই তারা দ্রুত দেহ দাহ করতে বাধ্য হয়। এই তাড়াহুড়ো কেন? সেটাই ভাবাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের।