নতুন রেশন নীতি কার্যকর করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেটা যে এককভাবে করা সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পেরেছে মোদী সরকার। তাই রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের এই যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেটা সফলভাবে রূপায়ন করতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠাবার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠি লিখে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এই কাজে জেলাশাসক এবং অভিজ্ঞ অফিসারদের যুক্ত করা হোক। এমনকী মুখ্যসচিবকেও এই কাজে যুক্ত হতে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? ‘ফ্রি’ রেশনের চমকের আড়ালে বছরে ১১৪ কোটি টাকার বেশি অর্থ থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করতে চলেছে মোদী সরকার। এখন রাজ্য সরকারকে এই টাকা দেওয়ার পথ বন্ধ করা এবং কোভিড–পর্বের বিশেষ পাঁচ কেজির রেশন (প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা) ডিসেম্বর মাসেই শেষ হয়ে যাওয়ায় দোকানদাদেরও উপার্জনে কোপ পড়তে চলেছে। সেখানে রেশন দোকানগুলি ঘুরে দেখা এবং আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ নিয়ে চলছে আলোচনা। এভাবে সমস্ত তথ্য জোগাড় করে আগামী ৫ জুলাই চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবে কেন্দ্র বলে ঠিক হয়েছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? এদিকে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী এক বছর গোটা দেশে পুরোপুরি বিনামূল্যে রেশনের চাল–গম বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এই কাজকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের নকল করে করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এই কাজ করার পরই মোদী সরকার এটাকে ‘এক রাষ্ট্র, এক দাম, এক রেশন’ হিসেবে তুলে ধরবে। তাই এই প্রকল্পকে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন সুরক্ষা যোজনা’ নামকরণ করে নতুন মোড়কে চালু করা হচ্ছে। আর সেটা করতে গিয়ে এখন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রকের সচিব সুধাংশু পান্ডে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে চিঠি দিয়ে লিখেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্র–রাজ্যের অভিজ্ঞ অফিসাররা রেশন দোকানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। রাজ্যকে একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে হবে। আর এই কাজে সহযোগিতা করতে হবে জেলাশাসক, সচিব, প্রধান সচিব এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে। মুখ্যসচিব যেন তাঁর কাজের ফাঁকে অন্তত এক–দু’টি রেশন দোকান ভিজিট করেন।
কেন এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে? সূত্রের খবর, মোদী সরকার দেখতে চায় রেশন দোকানপিছু কতজন উপভোক্তা রয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন, খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ব্যবস্থায় চালু প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে কি না, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ আছে কি না–সহ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার নাম ব্যবহার হচ্ছে কি না। এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘আগে রেশন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী না করে এই ধরনের পদক্ষেপ না করলেই ভাল করত কেন্দ্রীয় সরকার। আগে পরিকাঠামো-ব্যবস্থাপনা ঠিক করা হোক। তার পরে খামতি ধরা হোক।’