বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। আর তাকে সামনে রেখে রাজ্যে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। ইতিমধ্যেই যে যার ঘর গোছাতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় নির্বাচনের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তৃত্ব বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ করল রাজ্য সরকার। তবে এই রাজ্যের বিরোধীরা তাই চান। বিশেষ করে বিজেপি সেটাই চাইছে। সুতরাং কেন্দ্র–রাজ্য বিরোধ আবার প্রকাশ্যে আসতে চলেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
সূত্রের খবর, কেন্দ্র চাইছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকুক কমান্ডারদের হাতেই। তাহলে রাজ্য প্রশাসন নির্বাচনের সময় বেশি সুবিধা করতে পারবে না। রাজ্য সরকারকে প্রস্তাবও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য। নিজেদের সেই আপত্তির কথা কেন্দ্রকে জানিয়েও দিয়েছে নবান্ন। তবে কেন্দ্র এখনও প্রত্যুত্তর মেলেনি। বিজেপি’র রাজ্য নেতৃত্ব বারবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই পদক্ষেপ করতে আর্জি জানিয়েছিল। এমনকী রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় পর্যন্ত অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে এই পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সমন্বয়ের মূল বিষয় হল অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করা। সেক্ষেত্রে ভোটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশের হিসেব যেমন চাওয়া হয়, তেমন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তাও গুরুত্ব পায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভোটে গোলমালের আশঙ্কা, বিরোধীদের বক্তব্য— সবকিছু নিয়েই নির্বাচন কমিশন স্থির করে, রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচন কমিশন ঠিক করলেও বাস্তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি সমন্বয়ের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের উপরেই বর্তায়। কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা অন্য রাজ্য থেকে আসায় স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে তাঁদের সম্যক ধারণা থাকে না। ফলে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি কার্যত অনেকাংশেই পুলিশকর্তাদের উপরে নির্ভর করে। যদিও গোটা পরিস্থিতির উপর কমিশনের নজরদারি থাকে। এই ‘প্রথায়’ বদল আনতে প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি কী হবে, তা আর রাজ্য পুলিশের উপর কোনওভাবেই নির্ভর করবে না। বরং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দলনেতাদের সিদ্ধান্ত ‘চূড়ান্ত’ হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য পুলিশের কর্তার বক্তব্য, সাংবিধানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি রাজ্যের ব্যাপার। নির্বাচনের কর্মযজ্ঞে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এলাকার পরিস্থিতি, ভাষা, পরিচিতি সবই তাঁদের জানা। কয়েকদিন আগেই রাজ্যের থেকে ভোট–প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।