বাংলার জন্য কেরোসিন বরাদ্দ অর্ধেক করে দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কারণ আগামী অক্টোবর মাস থেকে নতুন কোটা কার্যকর হবে। বাংলায় তখন দুর্গাপুজো। আর তখনই কোপ দেওয়া হবে গরিবের হেঁশেলে। আগে অন্য রাজ্য যা পেত বাংলাও তা পেত। এখন থেকে আর পাবে না। সুতরাং অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলায় যা কেরোসিন পাঠাবে কেন্দ্র তা আগের তুলনায় অর্ধেক।
ঠিক কী ঘটতে চলেছে? এতদিন প্রত্যেক তিন মাসে পশ্চিমবঙ্গের রেশন গ্রাহকদের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন দেওয়া হতো। সেই হিসেবে মাসিক বরাদ্দ ছিল ৫৮ হাজার ৬৬৮ কিলোলিটার। অক্টোবর থেকে প্রতি তিন মাসের বরাদ্দ কমে হচ্ছে ৮৮ হাজার ৩৩২ কিলোলিটার। সুতরাং মাসিক বরাদ্দ দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৪৪৪ কিলোলিটার। সব রাজ্যের জন্যই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেরোসিনের বরাদ্দ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রক। অথচ অন্যান্য রাজ্য আগে যা পেত তাই পাবে। এটাকেই বাংলার ক্ষেত্রে বঞ্চনা হিসাবে দেখছে রাজ্য সরকার।
কেন এমন করল কেন্দ্রীয় সরকার? বাংলায় এখন বিদ্যুৎ সংকট নেই। আবার রান্নার গ্যাস অনেকে ব্যবহার করে। সুতরাং এখন কেরোসিন ব্যবহার আগের মতো হয় না। অথচ গ্রামীণ মানুষদের আয় কম থাকায় এখনও কেরোসিনই তাঁদের ভরসা। সেখানে কমিয়ে দেওয়ার অর্থ তাঁদের বিপদে ফেলা। ২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্যের কেরোসিনের কোটা কমানোর নীতি নেয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের একটি মামলার জেরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেরোসিনের বরাদ্দ কমাতে পারেনি কেন্দ্র। পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন এজেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। মামলা প্রত্যাহার হতেই রাজ্যের কেরোসিনের কোটা কমানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস? বাংলার গরিব মানুষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের এটা বঞ্চনার নীতি হিসাবেই দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা বাংলার প্রতি বৈষম্য। রাজ্যের বিজেপি নেতারা জবাব দিক। কেরোসিনের দাম হুহু করে বেড়েছে। ভর্তুকিও ছাঁটাই করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে বাংলার বরাদ্দ অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়বেন গরিব মানুষ।’ পশ্চিমবঙ্গ কেরোসিন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গুপ্ত বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের গরিব মানুষ সমস্যায় পড়বেন। ডিলারদের আয় কমিশন থেকে আসে। সেটাও কমবে। কেরোসিনের সরবরাহ কমলে দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে।’