একুশের নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভাঁওতা বলে সোচ্চার হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারকে এভাবেই আক্রমণ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার তা বাস্তবে মিলে গিয়েছে। কেন্দ্রের গণবণ্টন মন্ত্রকের সচিব সুধাংশু পাণ্ডের চিঠি থেকেই নরেন্দ্র মোদী–অমিত শাহদের প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা তার হাতেগরম প্রমাণ পাওয়া গেল। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে চিঠি দিয়ে খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের সচিব জানান, রেশন গ্রাহকদের সস্তা দরে ভর্তুকিতে চিনি, ডাল, নুন, কেরোসিন ইত্যাদি সরবরাহ করার কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। এই চিঠি হাতে পেয়েই সৌগতবাবুর তোপ, ‘সবাইকে রেশন দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের নেই সেটা স্পষ্ট। বিজেপির প্রতিশ্রুতি যে কতটা ভাঁওতা ছিল তা ধরা পড়ে গেল।’
একুশের নির্বাচনে বাংলা দখলের স্বপ্ন ফেরি করার সময় মোদী–শাহ নির্বাচনী ইস্তেহারে ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘সোনার বাংলা সংকল্প পত্র ২০২১’ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যেখানে গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সবাইকে রেশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল, ১ টাকা কিলো দরে চাল ও গম দেওয়া হবে। যথাক্রমে ৩, ৫ এবং ৩০ টাকা কিলো দরে নুন, চিনি এবং ডাল দেওয়া হবে। সেখানে করোনা মহামারির সময়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রেশন মিলছে না। আর আজ বাংলার উপর দিয়ে ইয়াস ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে। ফলে গ্রামবাংলার মানুষজন সহায়–সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিবকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে তিনি জানতে চান, রাজ্য বিজেপি তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে উল্লেখ করেছিল, তারা ক্ষমতায় এলে রেশন গ্রাহকদের জন্য কম দামে চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, নুন প্রভৃতি সরবরাহ করবে। ১ টাকা কেজি দরে চাল ও গম, ৩০ টাকা কেজি দরে ডাল ও ৫ টাকা কেজিতে চিনি রেশন গ্রাহকদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এসব সামগ্রী রেশনে কম দামে সরবরাহ করার কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের আছে? এই চিঠির জবাব দেন খাদ্যমন্ত্রকের সচিব সুধাংশু পাণ্ডে। পাল্টা চিঠি দিয়ে তিনি জানান, জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা নীতিতে কোনও বদল আনা হয়নি। জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রেশন গ্রাহকদের জন্য কেন্দ্র ২ টাকা কেজি দরে গম, ৩ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করে। মোটা দানাশস্য সরবরবাহ করা হয় ১ টাকা কেজি দরে। গ্রাহকরা মাথাপিছু ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পাচ্ছেন। এই ব্যবস্থাই চালু থাকবে। এছাড়া অন্ত্যোদয় শ্রেণির রেশন গ্রাহকদের জন্য পরিবার পিছু এক কেজি করে চিনি ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়। চিঠিতে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার চাইলে রেশন দোকানের মাধ্যমে খাদ্যশস্য ছাড়া অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে। অন্য কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের নেই। তারা ক্ষমতায় আসতে পারেননি বলেই ইস্তেহারে দেওয়া তথ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।