মশা–মাছি আর কলকাতাবাসী আগে একসূত্রে গাঁথা ছিল। আর অফিস–কাছারি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে আড্ডায় উঠে আসত খোলা ড্রেন, খোলা ভ্যাট, ভাঙা রাস্তা এবং লোডশেডিং নিয়ে নানা কথা। প্রতিবাদ–বিপ্লবও ছিল ওই পর্যন্তই। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর শহর থেকে গ্রামবাংলার সৌন্দর্যায়ণ এবং উন্নয়ন দুটোই ঘটেছে। এই পরিস্থিতি এখন শহরে নেই। দেখাও যায় না খোলা ড্রেন থেকে লোডশেডিং।
এখন আবাসন, হোটেল, কমপ্যাক্টর, মেকানিক্যাল ঝাড়ুদার কলকাতায় দেখা যায়। এই শহরে এখন গাছ লাগানো থেকে পরিষ্কার রাখতে কলকাতা পুরসভাকে উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়। প্রয়াত নেতা–মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন মেয়র ছিলেন তখন উড়ালপুল একের পর এক দেখেছিল মহানগরী। এখন দেখা যায় পরিচ্ছন্ন রাজপথ, ফুটপাত, নীল সাদা রঙের প্রলেপ এবং ত্রিফলা আলোর জেরে রাতের ঝলমলে কলকাতা। তবে এই শহরেই আজ বহু মানুষ পড়ে রয়েছেন দারিদ্রসীমার নীচে। এবার তাঁদের উন্নতি ঘটাতে পাইলট প্রজেক্ট শুরু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।
আরও পড়ুন: অবশেষে দিলীপ ঘোষকেই মাঠে নামাল বিজেপি, উত্তরবঙ্গের সংগঠন চাঙ্গা করতে উদ্যোগ
এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে থাকা দারিদ্রসীমার নীচের মানুষজনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা হবে। মূলত বস্তি অঞ্চলে এই পাইলট প্রজেক্ট করা হবে। যাতে তাঁদের উন্নতি হলেই সমাজের উন্নতি ঘটে। এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভার বস্তি বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘কলকাতাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে এই পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে। আপাতত ১৬টি বরোর মোট ১৬টি বস্তিতে এই প্রকল্পের কাজ করা হবে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলিকে স্বনির্ভর করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেন।’
এছাড়া রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, দেশের মোট ২৫টি বড় শহরে দারিদ্র দূর করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার জেরেই কলকাতায় কাজ শুরু হবে। কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে পাইলট প্রজেক্ট শুরু করতে হবে। বস্তিবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য চালু হবে ‘আরবান ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম’। রাস্তা, ড্রেন, কমিউনিটি সেন্টার থেকে শৌচালয় নির্মাণ—সব ক্ষেত্রেই বস্তি বাসীদের যুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পের চেয়ারম্যান করা হয়েছে কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈনকে। তবে স্বপন সমাদ্দারের কথায়, ‘শহরে কয়েকশো বস্তি আছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ থাকেন। আমাদের সহ–নাগরিকদের সঙ্গে পার্থক্য ঘুচিয়ে তাঁদের সাবলম্বী করতে হবে।’