লাইভস্ট্রিমিংয়ের দাবি ছেড়ে কোনওরকম ভিডিয়ো ছাড়াই বৈঠকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। এমনই দাবি করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কারণে পুরোটা ভেস্তে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। শনিবার রাতে কালীঘাটে মমতার বাসভবনের কাছে দাঁড়িয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করলেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা এসে বলেন যে আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আজ আর হবে না। বাসে করে বেরিয়ে যেতে বলেন। নাহলে বাস ডেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন চন্দ্রিমা। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কার্যত তাঁদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন বলে দাবি করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, আজ যা পরিস্থিতি হল, তাতে তাঁরা অত্য়ন্ত হতাশ হয়েছেন। আপাতত তাঁরা সল্টলেকে ধরনা মঞ্চের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা।
লাইভস্ট্রিমিং থেকে ভিডিয়ো রেকর্ডিং
বৃহস্পতিবারের পরে শনিবারের প্রস্তাবিত বৈঠকেও ভিডিয়ো নিয়ে জট তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি করেন যে বৈঠকের লাইভস্ট্রিমিং করতে হবে। যদিও তাতে রাজি ছিল না রাজ্য সরকার। কয়েক দফায় আলোচনা করেও সমাধানসূত্র না মেলায় ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখার প্রস্তাব দেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তাঁরা দাবি করেন, কালীঘাটে দু'জন ভিডিয়োগ্রাফারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাই রাজ্যকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে প্রশাসনের তরফে আলাদা করে ভিডিয়োগ্রাফি করা হোক। আর তাঁরাও আলাদাভাবে ভিডিয়ো করবেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবেও রাজ্য সরকার রাজি হয়নি বলে দাবি করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এমনকী রাজ্য সরকারের তরফে যিনি ভিডিয়ো করবেন, তাঁর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিকে রাখারও প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকারের তরফে বারবার সওয়াল করা হচ্ছিল যে শুধুমাত্র তারাই ভিডিয়ো করবে।
ভিডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে মমতার প্রস্তাব
সেই প্রস্তাবে অবশ্য প্রাথমিকভাবে রাজি ছিলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। কথা বলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। তিনি জানান যে সুপ্রিম কোর্টে এখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনায় এখন মামলা চলছে। তাই এখন ভিডিয়ো প্রকাশ করা যাবে না।
তাঁর উপরে আস্থা-ভরসা রাখার আর্জি জানিয়ে মমতা জানান যে আপাতত রাজ্যের তরফে ভিডিয়ো করে রাখা হবে। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে কোনওরকম হেরফের ছাড়াই জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই ভিডিয়ো। আর বৈঠকের কার্যবিবরণী রাখা হবে। তাতে রাজ্য সরকারের আমলা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করবেন।
ডাক্তাররা নমনীয় হলেও চন্দ্রিমার জন্য ভেস্তে গিয়েছে, অভিযোগ উঠল
মমতার সেই প্রস্তাবের পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে এসে তাঁদের আর্জি জানিয়েছিলেন, তাই ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই তাঁরা বৈঠকে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই বিষয়টি যখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাকে জানানো হয়, তখন তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে জুনিয়র ডাক্তাররা ‘লেট’ করে ফেলেছেন। তাঁরা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। আজ আর বৈঠক হবে না।