হাসপাতাল ভর্তি না নেওয়ায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল ক্যান্সার আক্রান্ত ২ বছরের একটি শিশুর। মৃত প্রিয়াংশি সাহা উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছির বাসিন্দা। পরিবারের অভিযোগ, বেশ কয়েক দিন ধরে তাকে একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করেও সাফল্য মেলেনি। রবিবার সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় তাঁর।
করোনার জেরে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করছে তা একেবারে মিথ্যে নয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল প্রিয়াংশি। বুধবার থেকে রবিবার, সরকারি বা বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই ভর্তি করা গেল না তাকে। শেষ বেলায় প্রশাসনের টনক নড়লেও ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। মা-বাবার সামনেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল মেয়েটি।
পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, প্রিয়াংশির দেহে একটি জন্মগত টিউমার ছিল। গত ডিসেম্বরে অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে থেকে সেটি বাদ দেন চিকিৎসকরা। বাদ পড়া টিউমার পরীক্ষা করে জানা যায় ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুটি। এর পর শুরু হয় চিকিৎসা। তাঁর ওপর কেমোথেরাপি প্রয়োগ করতে থাকেন চিকিৎসকরা।
গত বুধবার হঠাৎ প্রিয়াংশির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে প্রথমে মধ্যমগ্রাম মাতৃসদনে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। কিন্তু সেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই বলে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। সেখানে ছোট্ট শিশুটিকে রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু কেমোথেরাপি প্রয়োগের জন্য তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। ততক্ষণে মেডিক্যাল কলেজকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তাই সেখানে গিয়ে কাজ হবে না বুঝে মেয়েকে নিয়ে বামনগাছি ফিরে আসেন প্রিয়াংশির বাবা।
রবিবার ফের মেয়ের অবস্থা খারাপ হলে মেয়েকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু সেখানে অত ছোট শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বলে জানানো হয়। ফের তাকে কলকাতায় রেফার করা হয়। এরই মধ্যে খবর পৌঁছয় উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। তিনি শিশুটিকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। ব্যবস্থা হয় অ্যাম্বুল্যান্সের। এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সন্ধে ৭.৩০টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় প্রিয়াংশির।
এই ঘটনা নিয়ে ইন্ডিয়ার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান তথা তৃণমূল সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন জানিয়েছেন, ‘রাজ্য সরকারের তরফে বারবার হাসপাতালগুলিকে জানানো হয়েছে যে করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে যেন অন্য রোগীদের প্রতি কোনও অবহেলা না হয়। সমস্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নিতে হবে। এই ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা দেখব।’