জলসীমা লঙ্ঘন করার অপরাধে সম্প্রতি ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী। এর মধ্যে অধিকাংশ মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল মাস দুয়েক আগে। বাকি মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার করা হয়েছে গত মাসে। একসঙ্গে এতজন মৎস্যজীবী গ্রেফতার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে তারা রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আর এবার এইসকল মৎজীবীদের দেশে ফেরাতে এগিয়ে আসল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মৎস্যজীবীদের দেশে ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আগে কী হত, মৎস্যজীবীরা হারিয়ে যেতেন। পথ খুঁজে পেতেন না। আমরা ভাবতাম যে কোথায় গেল, কী হল। বাড়ির লোকজন ভাবতেন যে মৃত্যু হয়েছে নাকি। কিন্তু আমরা এখন একটা ট্র্যাকিং সিস্টেম করে দিয়েছি। তাতে আমরা ধরতে পারি যে তাঁরা কোথায় আছেন। আমাদের যে ৯৫ জন বাংলাদেশে আছেন, সেটা আমরা জানি।' সেইসঙ্গে তিনি জানান, পরিবারকে জানিয়ে দিতে যে কাল-পরশুর মধ্যে মৎস্যজীবীরা ফিরে আসবেন। আর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন যে ‘বাংলাদেশের যারা আটকে আছে, তাদের ছেড়ে দাও। আর আমাদের ভারতীয়রা যারা আটকে আছে, তাদেরও ছাড়িয়ে দাও।’
আরও পড়ুন: জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ, ১৬ ভারতীয় মৎসজীবীকে গ্রেফতার করল বাংলাদেশ
কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গত জুলাই মাস থেকে অস্থির হয়েছে বাংলাদেশ। তারপর গত ৫ অগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সেদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে। মাঝখানে কিছুদিন থেমে থাকলেও সম্প্রতি ফের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া মৎস্যজীবীদের পরিবারের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
গ্রেফতারের পরেই পরিবারগুলি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আর্জি জানিয়েছিল তাদের পরিবার। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই বিষয়টি পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়ের কানে। সেই বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি তাঁদের ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এবিষয়ে কেন্দ্র সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরাকে ফোন করে বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এনিয়ে মন্টুরাম জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নেওয়ার পাশপাশি দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এর জন্য পরিবারের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত দু মাস আগে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী ৭৯ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করেছিল। তারাও সকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ, আন্তর্জাতিক জলসীমা পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করার অভিযোগে গত অক্টোবর মাসে প্রথমে ৩১ জন মৎসজীবী ও তারও কিছুদিন পরে ৪৮ জন মৎসজীবীকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ উপকূলরক্ষী বাহিনী । পরে নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয় ১৬ জনকে।