মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে বারবার বলতে শোনা যায়, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও আজ, রবিবার ছট পুজোর সূচনায় দইঘাট এবং তক্তাঘাটে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, রবিবার এবং আগামীকাল সোমবার ভোরে ছটপুজো হবে। তাই কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘাটে ঘাটে বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত আলো। আর ঘাট পরিষ্কার রাখার জন্য প্রচুর পুরকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
কেন ছটপুজোয় দু’দিনের ছুটি? গতবছরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছটপুজোয় গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, আগে ছটপুজোতে রাজ্যে একদিন ছুটি থাকত। পরে তিনি জেনেছেন ছট পুজো আসলে দু’দিনের। তাই গতবছর থেকে দু’দিনের ছুটি ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি সব ব্রত পালন করি। দুর্গাপুজো যেমন করি, কালীপুজোয় করি। রমজান মাসেও আসি। বড়দিনের প্রার্থনাতেও যাই।’
ছটপুজোর বিশেষত্ব ঠিক কী? সংস্কৃত ভাষায় শব্দ ছটের অর্থ হল ষষ্ঠ। দেবী ষষ্ঠীর আরাধানা। চারদিনের এই পুজো আসলে সূর্যষষ্ঠী পালন বলা হয়। অনেকে একে বলে প্রতিহারষষ্ঠী। অতীত থেকে এই রীতি পালিত হয়। ঋগ্বেদেও সূর্য পুজো এবং তাঁর স্ত্রী উষাদেবীর পুজোর প্রচলন ছিল। কথিত আছে, সূর্যদেব এবং ছটদেবী ভাই–বোন। তাই ছট পুজোয় সূর্যের আরাধনা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আবার পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনার উৎপত্তি হয়েছিল সৃষ্টির মূল প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তিনি দেবী ষষ্ঠী। অবাঙালিরা দেবী ষষ্ঠীকে বলেন ‘ছটি মাইয়া’।
আর কী জানা যাচ্ছে? রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন সূর্যবংশীয়। তিনি অযোধ্যার সিংহাসনে বসার আগে ছটপুজোর তিথিতেই সরযূ নদীতে স্নান করে সূর্যের উদ্দেশে অর্ঘ্যদান করেছিলেন। আর মহাভারতের মতে, পাণ্ডবরা বনবাসে প্রবল অন্নকষ্টে ছিলেন। তখন রাজপুরোহিত ধৌম্যের পরামর্শে যুধিষ্ঠির চারদিনের সূর্য আরাধনা করেছিলেন। সূর্যদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের দিব্য পাত্র দিয়েছিলেন। দ্রৌপদীর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই পাত্রের খাবার ফুরিয়ে যেত না। পাশা খেলায় পাণ্ডবরা পরাজিত হলে দ্রৌপদী ছট ব্রত পালন করেছিলেন। তারপরই পাণ্ডবরা রাজ্য ফিরে পেয়েছিল।