চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার কথা বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার এহেন প্রস্তাবে বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। তবে এরই মাঝে সরকারের তরফে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গড়া হয় ডিপ্লোমা কোর্সের বাস্তবায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। সেই কমিটির প্রথম বৈঠক বসল সোমবার। স্বাস্থ্যভবনে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের উপস্থিতিতে সেই বৈঠক বসে গতকাল। সেই বৈঠকে বেশ কিছু বিষ নিয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে চিকিৎসক হতে গেলে ৫ বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। তবে মমতার প্রস্তাব অনুযায়ী ৩ বছরের প্রশিক্ষণে ‘হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল’ তৈরি করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে এই কমিটিকে। (আরও পড়ুন: ডিএ আন্দোলনে নয়া মোড়? হকের দাবি আদায় করতে ‘চূড়ান্ত ত্যাগে’ রাজি সরকারি কর্মীরা)
রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের মত, ডিপ্লোমার মাধ্যমে 'সেমি ডাক্তার' তৈরি করা যাবে না। তবে সহায়ক তৈরি করা যেতে পারে। তবে এই সহায়ক যাতে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সরকারকেই। বৈঠকের বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, 'কমিটির সঙ্গে আজ বিশদে আলোচনা হয়েছে ডিপ্লোমা সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে। আলোচনায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। এই আবহে কমিটির সজস্যদের সেই সব বিষয় এবং তাঁদের প্রস্তাব লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামীতে সেই বিষয় নিয়ে ফের আলোচনা হবে।' এদিকে স্বাস্থ্যসচিব এটা বলতে চাননি যে মুখ্যমন্ত্রীর ডিপ্লোমা প্রস্তাবে সবার সায় রয়েছে কি না। এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, 'আমি তো আর এই কমিটির সদস্য নই'।
আরও পড়ুন: ডিএ নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বড় পর্যবেক্ষণ, আরও অস্বস্তিতে মমতার সরকার
এদিকে কমিটির চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি তিনবছরের কোর্স নিয়ে। তবে এটা ঠিক যে গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে হবে রাজ্যে।' এদিকে কমিটিতে থাকা তৃণমূল সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ডাক্তারদের আমরা একটা ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে পারি কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ইঞ্জিনিয়ারদের মতো। তাহলে অনেক ছেলে মেয়ে ডাক্তারি ডিপ্লোমা কোর্সে সুযোগ পাবে। ৫ বছরের প্রশিক্ষণের পর যে চিকিৎসকদের আমরা পাচ্ছি তাতে অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু সিট বাড়ছে, হাসপাতাল বাড়ছে লোকসংখ্যা বাড়ছে, শয্যা বাড়ছে, তাই একটা ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় নিয়োগ করা যায় কি না তা দেখতে হবে। আমার মনে হয় এরা খুব ভালো ফল দেবে।’ যদিও মমতার এই ডিপ্লোমা ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।