একুশের নির্বাচনে জোট করে লড়াই করলেও ভোট পরবর্তী সময়ে ঘোঁট পেকেছে। আর এই ঘোঁট পেকেছে কংগ্রেস–সিপিআইএমের মধ্যে। সেখানে নেপো হিসাবে দই খাচ্ছে আইএসএফ। অর্থাৎ মজা নিচ্ছে। কারণ এই ঘোঁটে তাদের হাত নেই। কিন্তু জল মাপছে জোটটি কোনদিকে যায় তা নিয়ে। বিষয়টি হল এবার সরাসরি কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদককে নালিশ ঠুকেছেন। তাও আবার সিপিআইএমের বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে। এই পরিস্থিতিতে জল মাপছে আইএসএফ।
ঠিক কী ঘটেছে? জানা গিয়েছে, সিপিআইএম নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেছেন। আর এই পোস্টকে ঘিরে ঘোঁট পাকল জোট শরিক কংগ্রেস–সিপিআইএমের মধ্যে। বিকাশবাবুর দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে একাধিকবার সাঁইবাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ‘কংগ্রেসি গুন্ডা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন তিনি। সেখানে কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে সিপিআইএম নেতা–কর্মীদের হত্যার কথা লিখেছেন তিনি। এমনকী এই হত্যাকাণ্ডের স্মরণে আগামী ১২ জুন বর্ধমানের আহ্লাদিপুরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলীয় কর্মীদের ডাক দিয়েছেন।
এখন বিকাশ ভট্টাচার্যের এই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই তলে–বেগুনে জ্বলে ওঠেন কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা। বিকাশরঞ্জনকে কাঠগড়ায় তুলে কংগ্রেস কর্মীরা লেখেন, ‘বিকাশবাবু আপনি কংগ্রেসি গুন্ডাদের ভোটেই রাজ্যসভায় গিয়েছেন’। কেউ লিখেছেন, ‘বিকাশবাবু কংগ্রেস কর্মী হিসেবে আপনার এই পোস্ট দেখে আশ্চর্যই হচ্ছি। কারণ কংগ্রেস গুন্ডাদের সমর্থনে আপনি সাংসদ হয়েছেন। তাহলে কী ধরে নিতে হবে আপনার এই পোস্ট আপনার দলের অবস্থান?’ এখন এই পোস্ট অস্বস্তি বাড়িয়েছে জোটের অভ্যন্তরে।
এদিকে এই পোস্টের কথা জানতে পারেন বর্ষীয়ান রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য টেলিফোন করেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে। সূর্যকান্তর কাছে বিকাশের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকেছেন প্রদীপ। আর তাতেই বিকশিত হয়ে ওঠা বিতর্কে তপ্ত হয়ে উঠেছে সূর্য। কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকার প্রকট বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এই বিষয়ে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘কে কী পোস্ট করেছেন জানি না। আমরা এখন এই মুহূর্তে বিতর্কে ঢুকতে চাই না। এখন বিতর্কে ঢোকার সময় নয়।’ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ বলেন, ‘আমি মনে করি না পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা এখন আলোচনা করার কোনও অবকাশ আছে। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। অতীতের অনেক বিষাক্ত স্মৃতি ভুলেই তো নতুন বাংলা গড়ব বলে জোট করেছিলাম। এমন স্মৃতি তো দু’পক্ষেরই আছে।’
তবে বিতর্ক যখন দুই দলের মধ্যে তুঙ্গে তখন সাফাই দিয়ে বিকাশবাবু বলেন, ‘অতীতকে অস্বীকার করা যায় না। কারণ অতীতটা সত্যই। এখানে মতবিরোধের জায়গা নেই। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছি এটা সত্যি। এটাও ঠিক সাঁইবাড়ি নিয়ে বামপন্থীদের যে মত তা উল্লেখ করেছি। যদি কংগ্রেসের কেউ দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত।’ কিন্তু তিনি কেন এমন পোস্ট হঠাৎ করলেন? তা বুঝতে পারছেন না আলিমুদ্দিনের কর্তারা।