মণিপুর সরকারের দেওয়া কোনও প্যাকেজ নয়, সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় চাকরি ছেড়েছেন তাঁরা। সোমবার সংবাদসংস্থার কাছে এমনটাই দাবি করেছেন কলকাতায় ইস্তফা দেওয়া বেসরকারি হাসপাতালের নার্সদের অনেকে।
গত সপ্তাহ থেকে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ইস্তফা দিতে শুরু করেন ভিনরাজ্য থেকে আসা নার্সরা। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৬০০ নার্স ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যার ফলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভেঙে পড়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা। এদের মধ্যে রয়েছেন মণিপুর, ওড়িশা-সহ আরও একাধিক রাজ্যের নার্স।
কলকাতা ছেড়ে রবিবার মণিপুরে পৌঁছে এক নার্স জানিয়েছেন, তাঁদের ফেলে দেওয়া PPE ব্যবহার করতে বাধ্য করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছিল। এর মধ্যে আমাদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়, খেতে হয়। কিন্তু PPE পরে এগুলো করা সম্ভব নয়। আর একবার PPE খুললে তা ফেলে দিতে হয়। PPE দ্বিতীয় বার ব্যবহারের অনুমতি নেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের পুরনো PPE ফের ব্যবহার করতে বাধ্য করছিল। যার ফলে আমাদের Covid-19 সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছিল।’
সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, মণিপুর সরকারের তরফে কোনও ভাতা বা প্যাকেজ দেওয়া হয়নি তাঁদের। মণিপুর সরকারের মোটা টাকার প্যাকেজের লোভে নার্সরা কলকাতা ছাড়ছেন বলে দাবি করছিল শহরের কিছু হাসপাতাল।
একই কথা জানিয়েছেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তিনি বলেন, ‘নার্সদের ফিরে যেতে বলেনি তাঁর সরকার। তাদের কোনও ভাতা বা প্যাকেজ দেওয়ার কথাও হয়নি। কিন্তু কেউ যদি কলকাতায় থাকতে অস্বচ্ছন্দ বেধ করে তাহলে আমরা তো তাকে জোর করতেপারি না।‘
পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্বে ফিরে যাওয়া আরেক নার্স জানিয়েছেন, স্নান করা কাপড় কাচার জন্য জল পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত নার্সদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আমাদের হাসপাতাল থেকে ফিরে হস্টেলেই থাকতে হচ্ছিল। এর ফলে হস্টেলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল।
মণিপুরে ফিরে যাওয়া এক পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, কলকাতায় তাঁদের সঙ্গে বৈষম্য হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ওখানে চাকরি করতে গিয়েছিলাম। আমাদের মতো গরিব বাড়ির ছেলেদের চাকরির খুব দরকার। তাই কটূক্তি ও বৈষম্য সহ্য করে তারা নিজের শহরের বাইরে থাকতে বাধ্য হয়।’
গত সপ্তাহে কলকাতার একটি হাসপাতালের কর্তা জানিয়েছিলেন, মণিপুর সরকারের ডাকেই নিজের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছেন নার্সরা। কিন্তু ওড়িশা বা অন্য রাজ্যের নার্সরা কেন ফিরলেন তার জবাব দিতে পারেননি তিনি। পরে যদিও তিনি স্বীকার করেন, ভুল করে ওই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
সোমবার নবান্নে ভিনরাজ্যের নার্সদের কলকাতা ছাড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কথা বলে বিকল্প পথ খুঁজে বার করতে হবে। দরকারে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ করতে হবে স্থানীয় পুরুষ ও মহিলাদের।