করমণ্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ করতে লাগবে আরও সময়, পিঠ বাঁচাতেই কি সিবিআই?

এখন ঘটনাস্থলে আগের ছবিটা আর নেই। সাফ হয়ে গিয়েছে মৃত্যুমিছিলের মঞ্চ। বগিগুলির কঙ্কাল এখনও পড়ে রয়েছে। এই আবহে চাপা দেওয়া যাচ্ছে না দুটো প্রশ্ন—কীভাবে এবং কেন? অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব হাওয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং সিবিআই তদন্তের সুপারিশে দুর্ঘটনার অন্ধকার দিকগুলি আরও সামনে নিয়ে আসছে।

করমণ্ডল এক্সপ্রেস দু্র্ঘটনার তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে। কমপক্ষে তিনদিন আরও সময় লাগবে তদন্ত শেষ করতে। এবার সে কথা জানিয়ে দিলেন রেলের তদন্তকারী দলের প্রধান রেল সুরক্ষা কমিশনার (দক্ষিণ–পূর্ব সার্কল) এএম চৌধুরী। কারণ এখন সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। এখন ঘটনাস্থলে আগের ছবিটা আর নেই। সাফ হয়ে গিয়েছে মৃত্যুমিছিলের মঞ্চ। বগিগুলির কঙ্কাল এখনও পড়ে রয়েছে। এই আবহে চাপা দেওয়া যাচ্ছে না দুটো প্রশ্ন—কীভাবে এবং কেন? অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব হাওয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং সিবিআই তদন্তের সুপারিশে দুর্ঘটনার অন্ধকার দিকগুলি আরও সামনে নিয়ে আসছে। যাত্রীসুরক্ষায় চরম উদাসীনতা ধামাচাপা দিতেই কি শুরু হয়েছে উদ্যোগ? উঠছে প্রশ্ন।

এদিকে এখনও পর্যন্ত ৬জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা সকলেই ট্রেনের কর্মী ও চালক। গ্রামবাসীদের বয়ান এখনও নেওয়া হয়নি। তাই তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। রেল সুরক্ষা কমিশনার (দক্ষিণ–পূর্ব সার্কল) এএম চৌধুরীর কথায়, ‘কাজটা এতটাও সহজ নয় যে, কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলেই সেটা হয়ে যাবে। আরও তিন দিন সময় লাগবে।’ সিবিআইয়ের প্রাথমিক দাবিতেও কিন্তু অন্তর্ঘাতের পরিবর্তে গাফিলতির যুক্তিই স্পষ্ট। কারণ সোমবার ঘটনাস্থল ঘুরে এবং খুরদা রোডে গিয়ে রেল কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা দাবি করেছে, বাহানাগা লেভেল ক্রসিংয়ের ইন্টারলকিং সিস্টেমে গোলমাল রয়েছে। আর তা অনেকদিনের।

অন্যদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিগন্যাল, ইন্টারলকিং সিস্টেম, সবই খতিয়ে দেখেছেন রেল কর্তারাও। এই নিয়ে এখনই কোনও কথা কেউ বলতে চাইছেন না। রেল সুরক্ষা কমিশনার (দক্ষিণ–পূর্ব সার্কল) এএম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে সব দেখে এসেছি। এখন কিছু বলব না। অপেক্ষা করতেই হবে। আমায় পুরোটা দেখতে দিন। তদন্ত শেষে রেল বোর্ডকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’‌ বিরোধীদের অভিযোগ, পিঠ বাঁচাতেই সিবিআইকে আসরে নামিয়েছে কেন্দ্র। গাফিলতিকে ঢাকা দিতে চাইছে তারা। তাই সবার আগে ‘কবচ’ প্রযুক্তি সংক্রান্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ, এই প্রযুক্তি কার্যকর করার জন্যই গত তিনটি অর্থবর্ষে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল রেলকে। আশ্চর্যজনকভাবে তার একটা টাকাও খরচ হয়নি। ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে রেলের পিঙ্ক বুকেই এই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে ‘ইন্ডিজেনাস ট্রেন কলিশন অ্যাভয়েডেন্স সিস্টেম’ বলে উল্লেখ থাকলেও, তারই প্রচলিত নাম ‘কবচ’ প্রযুক্তি। ১ হাজার ৫৬৩ কিমি লো–ডেনসিটি নেটওয়ার্কে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দক্ষিণ–পূর্ব রেলের জন্য বরাদ্দকৃত ছিল ৪৬৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা।

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ এছাড়া লো–ডেনসিটি ওই দেড় হাজার কিমি রেল নেটওয়ার্কের জন্য ট্রেন সংঘর্ষরোধী উন্নত ব্যবস্থা কার্যকর করতে দক্ষিণ–পূর্ব রেলকে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩১২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এই খাতেও টাকা খরচ হয়নি। অর্থাৎ, যে গাফিলতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলছেন, তাতে সিলমোহর দিচ্ছে মোদী সরকারের তথ্যপঞ্জি। এমনকী রেলের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, চার বছরে ১৮ হাজার কিমি রেলওয়ে ট্র্যাক বদলানোর কথা ছিল মন্ত্রকের। প্রত্যেক বছর ৪ হাজার ৫০০ কিমি। কিন্তু সংসদে পেশ করা সর্বশেষ ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭–১৮ থেকে ২০২০–২১ পর্যন্ত বদলানো হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৯৮৪.৩৬ কিমি। রেলওয়ে বোর্ড এই দুর্ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে। সিবিআই তদন্ত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এএম চৌধুরী চৌধুরী বলেন, ‘দুটো তদন্ত পাশাপাশি চলতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না।’‌ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘একদিকে মৃত্যুমিছিল চলছে। কিন্তু ওদের কোনও লজ্জা নেই। শুধু মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।’