সম্প্রতি বাংলায় বন্যপ্রাণীদের হানা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বাংলার বিভিন্ন জেলায় প্রায়ই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতি। জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় হাতির তাণ্ডব লেগেই রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে শৌচাগার না থাকার কারণে জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় লোকালয়ে বন্যপ্রাণীদের হানা রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করছে নবান্ন। হাতিদের জন্য করিডর তৈরির পাশাপাশি এই সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকায় শৌচালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। করিডর এবং শৌচালয়ের জন্য নবান্নের তরফে কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হল না, কালচিনি চা বাগানে বনকর্মীকে পিষে দিল হাতি
নবান্ন সূত্রের খবর, স্বচ্ছ ভারত মিশনের আওতায় এই সমস্ত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে শৌচালয় তৈরি করা হবে। যদিও এই মিশনের আওতায় ইতিমধ্যেই বহু বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত এবং জনজাতিভুক্ত এলাকায় অবশ্য এর কাজ বাকি রয়েছে। আধিকারিকদের মতে, হাতির হানায় বাংলায় গড়ে ১০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সেখানে মৃতদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যাদের বাড়িতে শৌচাগার নেই। কারণ অনেকেই রয়েছে যারা মাঠে-ঘাটে শৌচকর্ম করতে গিয়ে হাতির হামলার মুখোমুখি হয়েছেন। তাই এই সমস্ত এলাকার প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ নিয়ে জোর দিতে চাইছে নবান্ন ।
এদিকে, হাতি করিডর তৈরির কথা আগেই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে হাতির হানা রুখতে করিডর তৈরি করার কথা বলেছিলেন। তারপরে নবান্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যে ৭টি হাতি করিডর তৈরি করা হবে। তার জন্য ইতিমধ্যে রূপরেখা তৈরি হয়েছে। প্রতিটি হাতি করিডর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪০০ মিটার চওড়া হবে। এর জন্য ৬২৫ থেকে হাজার হেক্টর জমির প্রয়োজন। এই করিডরের মধ্যে পুকুর খননেরও ব্যবস্থা করা হবে। হাতির জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকবে করিডরের মধ্যে। এ ছাড়াও থাকবে খাবারের ব্যবস্থা। হাতির পছন্দের ঘাস এই করিডরে লাগানো থাকবে। ইতিমধ্যে জমির ব্যবস্থা হয়েছে। হাতির চলার পথে খাবার জলের ব্যবস্থা এবং খাবারের ব্যবস্থা থাকলে তারা অন্যদিকে যাবে না বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, করিডর তৈরির পর ধাপে ধাপে হাতির গলায় কলার পরানোর ভাবনা চিন্তা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেই কলারের সঙ্কেত বিশ্লেষণ করে লোকালয়ে হাতির হানা রোখা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই এবিষয়ে কর্ণাটক এবং কেরল সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরা। কর্নাটকে হাতির হানা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।