বর্বর! নারকীয়! ঘৃণ্য! এমন যত বিশেষণই প্রয়োগ করা হোক না কেন, তা বোধ হয় যথাযথ হবে না, কলকাতার বড়তলা থানা এলাকার শিশু অপহরণ ও যৌন নিগ্রহের ঘটনায়। সাতমাসের একরত্তি শিশুকে তুলে নিয়ে তার উপর অকথ্য যৌন নির্যাতন চালায় ৩৪ বছরের এক যুবক! গত নভেম্বর মাসের সেই পৈশাচিক ঘটনায় অভিযুক্তকে সমস্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) দোষী সাব্যস্ত করা হল। মঙ্গলবার তাকে সাজা শোনাবে আদালত।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর কলকাতার বড়তলার ফুটবাসী এক দম্পতি স্থানীয় থানার শরণাপন্ন হয়ে জানান, তাঁরা কিছুক্ষণের জন্য তাঁদের সাতমাসের দুধের শিশুকে ফুটপাথেই নিজেদের বাসস্থানে শুইয়ে রেখে কোনও কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপর থেকে একরত্তি সেই মেয়েকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
যদিও দম্পতির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর ওই ফুটপাথেই, দম্পতির থাকার জায়গা থেকে মেরেকেটে ১০০ মিটার দূরে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, অপহরণের পর তার উপর নিদারুণ যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং তারপর ফের ফুটপাথে ফেলে যাওয়া হয়েছে!
এই ঘটনায় তদন্তে নামে পুলিশ। একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে পুলিশ। জানা যায়, তার নাম - রাজীব ঘোষ। ৩৪ বছরের ওই যুবক ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর এলাকার বাসিন্দা। এরপর গত বছরেরই ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে রাজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে শিশুটির উপর বিকৃত যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। একরত্তির যৌনাঙ্গে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল! পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হলে, সেখানেও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হন চিকিৎসকরা।
সোমবার সেই মামলাতেই রাজীব ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ পকসো কোর্টের বিচারক। আগামিকাল দোষীর সাজা ঘোষণা করা হবে।
এই ঘটনায় সরকারি আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এটি 'বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা'। সেকথা সরকারি চিকিৎসকই বলেছেন। সরকারি আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, 'অজস্র সিসিটিভি ফুটেজ আমরা দেখেছি। আরজি কর হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছিলেন শারীরিক পরীক্ষার জন্য। সেই চিকিৎসকও জানিয়েছেন, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। যেভাবে ওইটুকু শিশুর উপর অত্যাচার করা হয়েছে, তা ভাবা যায় না। আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।'
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ১৩৭(২), ৬৫(২) এবং শিশু সুরক্ষা আইনের (পকসো) ৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতে ১৩ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট জমা দেয় তারা। বিচার ও শুনানি চলাকলীন একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।