গত ১ মার্চ (২০২৫) কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থা করার ঘটনা হোক, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন 'শিক্ষাবন্ধু'র কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা - সবই কি আসলে পূর্ব পরিকল্পিত? এমন একটা অভিযোগ ইতিমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে তোলা হচ্ছে। আর, এবার 'শিক্ষাবন্ধু'র কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সেই ঘটনায় ধৃত ছাত্র সৌম্যদীপ মহন্তের জামিনের আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ায় পুলিশের সেই তত্ত্ব নিয়ে আরও আলোচনা শুরু হয়ে গেল।
উল্লেখ্য, বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) রাতেই সৌম্যদীপ ওরফে শৌন্যদীপ (সমাজমাধ্যমের নাম) ওরফে উজানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাত ৯টা নাগাদ ফোনে সেকথা তাঁর পরিবারকে জানানো হয়।
এরপর আজ (বৃহস্পতিবার - ১৩ মার্চ, ২০২৫) সৌম্যদীপকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন বাতিল করে পাঁচদিনের জন্য তাঁকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌম্যদীপ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। যদিও বন্ধু মহলে তিনি উজান নামেই অধিক পরিচিত। এহেন সৌম্যদীপকে 'শিক্ষাবন্ধু'র কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এই একই মামলায় এর আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাহিল আলি নামে আরও এক (প্রাক্তন) ছাত্রকে। তাঁকে অবশ্য বুধবারই আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এদিন সৌম্যদীপের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। আগামী ২৪ তারিখ তাঁর পরীক্ষাও রয়েছে। ঘটনার মূল এফআইআর-এ তাঁর নামও ছিল না। পুলিশ তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। অথচ, সৌম্যদীপ থানায় যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করে নেওয়া হয়। তাই, যেকোনও শর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। এই ঘটনায় আগেই সাহিল আলিকে যে জামিন দেওয়া হয়েছে, সেকথাও উল্লেখ করেন সৌম্যদীপের আইনজীবী।
কিন্তু, এই মামলায় অভিযোগকারী ও সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য ছিল সৌম্যদীপের আইনজীবীর থেকে ভিন্ন। তাঁদের সওয়াল ছিল, যাদবপুরে যেমন অসংখ্য মেধাবী পড়ুয়া রয়েছেন, তেমনই কিছু পড়ুয়া শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
ধৃত সৌম্যদীপও পুলিশকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করা হয় মামলাকারী ও সরকারি আইনজীবীর পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট ঘটনার সময়কার ছবি এবং কোনও একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ চ্যাটের স্ক্রিনশট আদালতে পেশ করা হয়। দাবি করা হচ্ছে, সেই গ্রুপ চ্যাট থেকেই স্পষ্ট যে ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার ঘটনা থেকে শুরু করে শিক্ষাবন্ধুর কার্যালয়ে আগুন ধরানো পুরোটাই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত!
আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্ত্রী এলে কী করতে হবে, পুলিশ ঢুকলে কী করতে হবে, সবই নাকি ওই গ্রুপ চ্যাটে আলোচনা করা হয়েছিল। এমনকী, সেখানে আগুন ধরানোর পরিকল্পনারও উল্লেখ ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ধৃত ছাত্রের সঙ্গে ওই গ্রুপ চ্যাটের আলোচনার সম্পর্ক কতটা, তিনি ওই আলোচনায় ছিলেন বা সেই বিষয়ে কিছু জানতেন কিনা - সেসব খতিয়ে দেখার জন্য তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া দরকার বলে অভিযোগকারী এবং সরকার পক্ষের আইনজীবী যুক্তি পেশ করেন। পাশাপাশি, এও বলা হয় - প্রয়োজনে পুলিশ হেফাজতে থেকেও আগামী ২৪ তারিখের পরীক্ষা দিতে পারেন সৌম্যদীপ।
বিচারক সবদিক খতিয়ে দেখার পর ওই ছাত্রের জামিনের আবেদন বাতিল করে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।