করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে এবার টান পড়ল রাজ্যের রক্তের ভাঁড়ারেও। গত সপ্তাহ থেকে রক্তদান শিবির আয়োজিত না হওয়ায় ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।
রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি রোগীদের রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁদের বাড়ির লোককে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু Covid-19 সংক্রমণের জেরে এই পরিস্থিতিতে রক্তদাতা পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শহরে বেশিরভাগ ব্লাড ব্যাঙ্কই বেসরকারি মালিকানাধীন। অন্য দিকে, শহরতলি ও জেলাস্তরে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলি সরকগারি ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরেই নির্ভরশীল।
শনিবার মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কল্যাণ কর জানান, ‘যে সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আমরা প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ করি, সেগুলি এখন জোগান দিতে ব্যর্থ। কার্ডিয়াক সার্জারি, ক্যানসারের অস্ত্রোপচার ও সিজারিয়ান ডেলিভারির জন্য রক্ত জরুরি। এই অস্ত্রোপচারগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেলে রাখা যায় না। সরকারের উচিত, নিয়ন্ত্রিত ভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সব রোগীর পরিবারের রক্তদাতা জোগাড় করা সম্ভব নয়।’
কলকাতার অশোক ব্লাড ব্যাঙ্কের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমাদের সংগ্রহে আর রক্ত নেই। যাঁদের রক্ত দরকার, তাঁদের ব্যক্তিগত রক্তদাতা জোগাড় করতে হবে। নিয়ম মেনে আমরা তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করে এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করছি। যাঁদের একাধিক ইউনিট রক্ত দরকার, তাঁরা গভীর সমস্যায় পড়ছেন।’
শহরের আর এক বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক লাইফ কেয়ার-এর মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কাছে শুধুমাত্র কিছু বি পজিটিভ গগগ্রুপের রক্ত পড়ে রয়েছে। এমন ঘাটতি চলতে থাকলে মানুষ সমস্যায় পড়বেন।’
আরও এক ব্লাড ব্যাঙ্ক ভোরুকা রিসার্চ সেন্টার-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে রক্তদান শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই রক্তের জন্য হাহাকার বেড়ে গিয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘রক্তের অভাব দেখা দেওয়ায় আমার বিভাগে অস্ত্রোপচারে সমস্যা দেখা দেয়নি।’
আবার অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হাসপাতালের কর্তা অমিতাভ পাল জানান, ‘আমাদের হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজন রয়েছে এমন রোগীদের আমাদের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই রক্ত দেওয়া হয়। চূড়ান্ত জরুরি পরিস্থিতি এলে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে রেফার করা হয়।’
অন্য দিকে কোচ বিহারের দিনহাটা শহরের এক নার্সিংহোমের তরফে ম্যানেজার সৈকত বসু জানিয়েছেন, ‘গত দুই দিনে আমরা কোনও জটিল অস্ত্রোপচারের রোগী পাইনি। কিন্তু আমরা রক্তের অভাবের কথা শুনেছি।’
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের ডিরেক্টর অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও লাগাতার জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি কথা বলতে পারেননি।