করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে আলো দেখাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেই দলে রয়েছেন এক বাঙালি। তিনি বঙ্গকন্যা চন্দ্রা দত্ত।
আরও পড়ুন : Immunity Passports for Covid-19: করোনায় সেরে ওঠা রোগীদের ইমিউনিটি পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা WHO-এর
বছর ৩৪-এর চন্দ্রা আপাতত অক্সফোর্ডে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। যারা করোনার প্রতিষেধক (ChAdOx1 nCoV-19) তৈরির পথে ‘ফাইনাল পরীক্ষা’ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া মানবদেহে পরীক্ষা বা হিউম্যান ট্রায়ালে পাশ করলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মিলবে প্রতিষেধক।
আরও পড়ুন : Covid-19 Updates: ভাসমান ধূলিকণার সঙ্গে মিশতে পারে করোনাভাইরাস
আদতে টালিগঞ্জের বাসিন্দা চন্দ্রা গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল থেকে ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে হেরিটেজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজিতে বি.টেক সম্পূর্ণ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০০৯ সালে ব্রিটেনে পাড়ি দেন। লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এমএসসি করেন চন্দ্রা। তারপর একাধিক চাকরি করেন। গত বছর থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক্যাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। আর সেটিই প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রতিষেধক তৈরি করেছে। জেনার ইনস্টিটিউটে তৈরি প্রতিষেধকের উৎপাদন করছে। প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে সেটির গুণগত বিষয়টি দেখেন চন্দ্রা। ভুল শুধরে সমস্ত প্রক্রিয়া ঠিকঠাক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন চন্দ্রা। একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, 'গত একমাস সবাই খুব চাপে ছিলেন। কিন্তু আমরা এটা খুব তাড়াতাড়ি করেছি। এটা দলের সবার প্রচেষ্টার ফল।' সেজন্য দলের বাকি সদস্যের সঙ্গে আনন্দও করেছেন। আপাতত বাড়ি থেকে কর্মরত চন্দ্রা বলেন, 'আমি সমস্ত কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখার পর কোয়ালিটি প্রফেশনাল সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শংসাপত্র দেন। তিনি খুশি যে প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। এটা বুধবার হয়েছিল। এটা বড়দিন ছিল। আমরা বড় করে উদযাপন করি। জুমে একসঙ্গে ওয়াইন ও কেক খাই।'
আরও পড়ুন : অবশেষে করোনামুক্ত উহান, সংক্রমণের আশঙ্কায় বেজিংয়ে জারি কড়া নিষেধাজ্ঞা
এরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত খুশি চন্দ্রা। তিনি বলেন, 'এটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আমি বরাবর ফার্মাকিউটিক্যাল সংস্থায় কাজ করেছিল। আমার মতে, মানবজীবন আরও ভালো করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তবে আগে এরকম কিছুর সাক্ষী থাকিনি। দুর্দান্ত অনুভূতি। আমার মতে, সারা বিশ্ব এই প্রতিষেধক চায় যাতে জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।'
আরও পড়ুন : ক্রমশ বাড়ছে করোনার প্রভাব, পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ৬৪৯
ভারতেও প্রতিষেধক উৎপাদনের বিষয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানান চন্দ্রা। তিনি বলেন, 'আমি ডিস্ট্রিবিউশনে কাজ করি না। কিন্তু আমি যা জানতে পেরেছি, তাতে ট্রায়ালে পাশ করার আগে আমরা পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটে বড়সড় উৎপাদন করব। যাতে ট্রায়ালে উতরে গেলেই তা বাজারে চলে আসে।'
আরও পড়ুন : Covid-19 news: সংক্রমণকালে কী ভাবে এসি ব্যবহার করবেন, জানাল কেন্দ্র
বিলেতে মেয়ের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত চন্দ্রার বাবা-মা। গলফ গার্ডেনের ফ্ল্যাটে বসে সমীরকান্তি দত্ত ও কাবেরী দত্ত জানান, গত ডিসেম্বরে কলকাতায় এসেছিলেন চন্দ্রা। সপ্তাহদুয়েক মতো ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির পর থেকে মেয়েকে চিন্তিত ছিলেন সমীরবাবু। তবে মেয়ের উপর যে দায়িত্ব রয়েছে, তা ভালোভাবে জানেন তিনি। আর তাই গর্বিত বাবা বলেন, 'আমার মেয়ে বরাবর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও পরিশ্রমী পুরো দলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ও প্রার্থনা করছি। সর্বোপরি এটা মানবতার কাছে বিশাল বড় বিষয় এবং আমি গর্বিত যে আমার মেয়ে এরকম দারুণ বিষয়ের সঙ্গে জড়িত আছে।'
আরও পড়ুন : আগামী সপ্তাহে বর্তমান ও নতুন শিক্ষাবর্ষ সম্পর্কে নিয়মাবলী স্থির করবে UGC