বুধবার রাত থেকেই ব্যারিকেড করে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মাছি গলে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এই ঘোরাটোপের মধ্যে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস আক্রান্তকে চিহ্নিত করতে কলকাতা পুরনিগমের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া বস্তি এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হল।
আরও পড়ুন : নিরাপত্তায় ফাঁকফোকর, Zoom app ব্যবহার করতে মানা করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
গত কয়েকদিনে ঘনবসতি বেলগাছিয়া বস্তিতে কমপক্ষে ছ'জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে বলে খবর। তবে বস্তির করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তনু সেন। তিনি বলেন, 'কতজনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, সেই সংখ্যাটা জানাতে পারব না। কিন্তু কয়েকটি সংক্রমণের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। প্রশাসন সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।'
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক অবশ্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বস্তির মোট ছ'জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু'জন একই পরিবারের সদস্য। পরিবারের অন্য সদস্যদের রাজারহাট ও হজ হাউসের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : Fact Check: হেলিকপ্টার থেকে কি টাকা ফেলবে কেন্দ্র?
বস্তিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস বলে জানিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ। সঙ্গে বাড়িগুলির মধ্যে কার্যত কোনও ব্য়বধান নেই। একে অপরের গায়ে লেগে আছে। কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, 'যেহেতু এখানে কয়েকটি কেস (করোনা কেস) পাওয়া গিয়েছে, সেজন্য সব নজর এখন বস্তির উপর। কারণ এটা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বাড়িগুলির মধ্যে কোনও ফাঁকা জায়গা নেই। এমনকী প্রত্যেকের কাজের সময়ের উপর নির্ভর করে শোওয়ার জায়গা ভাগ করা হয়। লকডাউনের জেরে সবাই বস্তিতেই থাকছেন। ফলে আরও স্থান সংকুলান হচ্ছে।'
আরও পড়ুন : Lockdown 2.0: যে তেরো কাজ করতে পারবেন না তেসরা মে পর্যন্ত..
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য ইতিমধ্যে ‘স্পর্শকাতর’ তালিকার প্রথমদিকে বেলগাছিয়া বস্তিকে রাখা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। বিষয়টি নিয়ে বুধবার জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকও হয়। শান্তনু বলেন, 'বেলগাছিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বুধবার একটি বিশেষ বৈঠক হয়। ঠিক হয়েছে, প্রতিদিন অলিগলিতে জীবাণুনাশ করার প্রক্রিয়া চলবে। ১৫ টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দু'জন স্বাস্থ্যকর্মী, কাউন্সিলের প্রতিনিধি রয়েছে।'
সেইমতো সুরক্ষাবরণী বা পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) পরে বৃহস্পতিবার এলাকায় যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। কোন বাড়িতে কতজন বয়স্ক বাসিন্দা আছেন, কেউ অসুস্থ কিনা, আগে কোনও জটিল রোগ ছিল কিনা, সম্প্রতি জ্বর, সর্দি, কাশির মতো দেখা দিয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কারোর সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : Railway Recruitment 2020: রেলে চলছে নিয়োগ, সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশে বেতন, দেখে নিন আবেদনের প্রক্রিয়া
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক জানান, ভাইরাসের থেকে দ্রুতগতিতে গুজব ও ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, 'এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ভাবুন আট ফুট বাই আট ফুট ঘরে ১০ জন থাকছেন। জায়গার অভাবে সাধারণত লোকজন রাস্তায় ঘুমায়। পাশাপাশি, নিরক্ষতার কারণে ভুয়ো খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।'
আরও পড়ুন : আচমকা লাঠি নিয়ে তেড়ে এল ওরা- মোরাদাবাদে জনতার হাতে প্রহৃত ডাক্তারের বয়ান
তবে শুধু বেলগাছিয়া নয়, কলকাতার বাকি বস্তিগুলিতেও একইরকম অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সেই তালিকায় রয়েছে বালিগঞ্জ, নারকেলডাঙা, বন্দর এলাকার কয়েকটি এলাকা। ওই এলাকাগুলিতে র্যাপিড টেস্ট করার ভাবনাচিন্তা চলছে।