লোকসভা নির্বাচনেও বুক ভরা শূন্যতা রয়েছে সিপিএমের। কারণ একটি আসনও দল পায়নি। তাই বাংলায় দলের ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক বলে ব্যাখ্যা করল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১৯ সালের পর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বাংলায় একটি আসনেও জেতেনি সিপিএম। ২৩ আসলে লড়াই করে ২১টিতে জামানত জব্দ হয়েছে। মাত্র একটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে আছে। সেটি মুর্শিদাবাদ আসন। সেখানে প্রার্থী ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলায় দলের হতাশাব্যঞ্জক ফলের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেঙ্গল লাইনকে ধমক দিয়েছে। মহম্মদ সেলিমদের সেটা হজম করতে হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এবার থেকে কি পথ বদলাবে? উঠছে প্রশ্ন।
লোকসভা নির্বাচনে প্রকৃত সর্বহারার তকমা পাওয়ার পর কলকাতায় দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তখন ভোটের ফল নিয়ে সরাসরি বলেছিলেন, ‘বাংলায় আমরা নতুনরকমের পার্টি পেয়েছি। ফল খারাপ হলেও এখানে প্রচার খুব ভাল হয়েছে।’ অর্থাৎ তরুণ প্রার্থীদের ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াইয়ের কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন। সেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির দলিলে বলা বলেছে, এই বিষয়ে কাঙ্খিত ফল মেলেনি। কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, বাংলার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করা বামপন্থীদের কর্মসূচি ছিল। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখার প্রয়োজন ছিল। যেহেতু লোকসভা নির্বাচন তাই খুব জরুরি ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো।
আরও পড়ুন: ‘দু’মাস দেখব, তারপর অন্য কিছু ভাবতে হবে’, বিজেপিকে আল্টিমেটাম দিলেন দিলীপ
সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণই প্রাধান্য পেয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলার পার্টির এই মানসিকতাকে ‘সমস্যা’ বলে উল্লেখ করেছে। সুতরাং বেঙ্গল লাইন যে ঠিক ছিল না এবং তার জন্যই ভরাডুবি হয়েছে কার্যত তা বুঝিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখানে বিশেষ খাপ খুলতে পারেননি সেলিমরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাগাতার বাম–বিজেপি বোঝাপড়ার অভিযোগ করেছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছে। তবে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে। কারণ, বিজেপি হেরেছে, এমন অনেকগুলি আসনে সিপিএম ভাল ভোট পেয়েছে।
এইসব উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গ–সিপিএমকে। এবার থেকে বিজেপি বিরোধিতা বাড়াতে হবে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের খুব ভাল জায়গায় আছে। স্থানীয় ইস্যু নিয়ে নিশ্চয়ই বলা হবে। কিন্তু বেশি জোর দেওয়া হবে দেশের ইস্যুগুলিকে বলে সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় কমিটির স্বীকারোক্তি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার–সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলির কারণে তৃণমূল বেশি ভোট পেয়েছে। সেখানে পার্টির বহু ইউনিট এবং কর্মীদের মুখে এই সব প্রকল্পকে ‘ভিক্ষা’, ‘ঘুষ’ বলে উপহাস করার ফলে গরিব মানুষ দলের কাছ থেকে সরে গিয়েছে। সুতরাং সেটা ভুল হয়েছে।