২০১১ সালে রাজপাট গিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধান বিরোধী দল ছিল। তারপর থেকে শুধুই শূন্যতা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে তা শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তা অব্যাহত। শূন্য থেকে এক হয়নি আসন সংখ্যা। মাঝে কেটে গিয়েছে একাধিক পুরসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও উপনির্বাচন। সিপিএমের ফলাফল শূন্য। এবার এই বুক ভরা শূন্যতা কাটাতে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিতে চায় সিপিএম। গ্রামবাংলার খেটে–খাওয়া মানুষের মন পেতে দলের তরুণ ব্রিগেডকে নিয়ে ময়দানে নেমে ‘প্র্যাকটিকাল’ ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন। বলা যেতে পারে পার্টি ক্লাসের আধুনিক রূপ।
আগে সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল তখন পার্টি ক্লাস হতো। তবে সেটা সম্পূর্ণ রুদ্ধদ্বার কক্ষের মধ্যে। সেখানে আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আশু করণীয় কাজ সবই বোঝানো হতো। কিন্তু এই পার্টি ক্লাস এখনকার সময় অনুযায়ী বেমানান। তাই এবার তরুণদের জন্য নতুন ধাঁচে হাতেকলমে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই আধুনিক ধাঁচের ক্লাস করতে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে কলতান দাশগুপ্ত, দীপ্সিতা ধরদের মাঠে নামতে হবে। তাঁরা যাবেন গ্রামবাংলার প্রান্তিক মানুষের দুয়ারে। শিক্ষক হিসেবে পাশে থাকবেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং আরও অনেক তাবড় নেতারা।
আরও পড়ুন: অমৃত ভারত প্রকল্পে সেজে উঠেছে মালদা টাউন স্টেশন, ওয়েটিং লাউঞ্জ–সহ আর কী আছে?
একের পর এক নির্বাচনে তরুণ নেতা–নেত্রীদের প্রার্থী করেও ফসল ঘরে তোলা যায়নি। বারবার প্রমাণ হয়েছে মানুষের সঙ্গে সিপিএমের এই তরুণ ব্রিগেডের যোগাযোগ নেই। সভা–সমাবেশ ছাড়া তাঁদের দেখা যায় না। জনসংযোগ বলতে যা বোঝায় সেটা এই নেতা–নেত্রীদের নেই। তাই এবার গ্রামের মানুষের মন পেতে নয়া পথ ধরতে চলেছে আলিমুদ্দিন। খোলা আকাশের নীচে রাজনীতির পাঠ দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। তাই পুঁথিগত বিদ্যা থেকে বেরিয়ে এসে এবার হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া হবে। একজন মানুষের সঙ্গে দেখা হলে কথা শুরু কেমন করে করতে হবে, মানুষের দরজায় কড়া নেড়ে সমস্যা শুনতে হবে। যদি মানুষ তাড়িয়েও দেয় তাহলে সেটাই মাথা পেতে মেনে নিয়ে চলে আসতে হবে।
এমন নানা ধরণের বিষয় কমরেডদের সামনে তুলে ধরা হবে। অতীতের ভুল নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে কেমন রিয়েক্ট করতে হবে তাও এই আধুনিক ক্লাসে শেখানো হবে। তবে পুরনো মার্কসীয় তত্ত্ব সিলেবাসে খুব একটা থাকবে না বলেই সূত্রের খবর। কারণ ওইসব নীতি কথা বা তাত্ত্বিক কথা গ্রামবাংলার মানুষ বোঝেন না। শুনতেও চায় না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই নয়া প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস শুরু হবে। যা সিপিএমে নজিরবিহীন। আগে কখনও হয়নি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্যতার গেরো কাটাতেই এই উদ্যোগ। গণসংগঠনগুলিকে দিয়ে ছাত্র–যুবদের টিম গড়ে তুলে সব জায়গায় সংগঠনের কাজ করানো হবে। আর শহর থেকে নেতারা সেখানে যাবেন। গ্রামের মানুষের মন বোঝার পাঠ দেবেন নেতারা। এখন তৈরি হচ্ছে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের সিলেবাস বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘সিপিএম একমাত্র দল যাদের একটা স্থায়ী পার্টি স্কুল আছে। এবার হাতেকলমে কাজ শেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’